বীরের উপযুক্ত প্রত্যুত্তর; কিন্তু কথা এই যে, কেবল বীরত্বে জয়লাভ নাই; যথানীতি সন্ধি-বিগ্রহ করিলেই জয়লাভ। তুমি নিজে বীরাগ্রগণ্য; কিন্তু তোমার সেনা সহস্রাধিক নহে; কোন্ যোদ্ধা সহস্রেক সেনা লইয়া শতগুণ সেনা বিমুখ করিতে পারে? মোগল পাঠান উভয় পক্ষই সেনা-বলে তোমার অপেক্ষা শতগুণে বলবান্; এক পক্ষের সাহায্য ব্যতীত অপর পক্ষের হস্ত হইতে উদ্ধার পাইতে পারিবে না। এ কথায় রুষ্ট হইও না, স্থিরচিত্তে বিবেচনা কর। আরও কথা এই যে, দুই পক্ষেরই সহিত শত্রুভাবে প্রয়োজন কি? শত্রু ত মন্দ; দুই শত্রুর অপেক্ষা এক শত্রু ভাল না? অতএব আমার বিবেচনায় পক্ষাবলম্বন করাই উচিত।”
বীরেন্দ্র বহুক্ষণ নিস্তব্ধ থাকিয়া কহিলেন, “কোন্ পক্ষ অবলম্বন করিতে অনুমতি করেন?”
অভিরাম স্বামী উত্তর করিলেন, “যতো ধর্ম্মস্ততো জয়:,—যে পক্ষ অবলম্বন করিলে অধর্ম্ম নাই, সেই পক্ষে যাও; রাজবিদ্রোহিতা মহাপাপ, রাজপক্ষ অবলম্বন কর।”
বীরেন্দ্র পুনরায় ক্ষণেক চিন্তা করিয়া কহিলেন, “রাজা কে? মোগল পাঠান উভয়েরই রাজত্ব লইয়া বিবাদ।”
অভিরাম স্বামী উত্তর করিলেন, “যিনি করগ্রাহী, তিনিই রাজা।”
বী। আক্বর শাহা!
অ। অবশ্য।
এই কথায় বীরেন্দ্রসিংহ অপ্রসন্ন মুখভঙ্গী করিলেন; ক্রমে চক্ষু আরক্তবর্ণ হইল; অভিরাম স্বামী আকারেঙ্গিত দেখিয়া কহিলেন,—“বীরেন্দ্র! ক্রোধ সংবরণ কর; আমি তোমাকে দিল্লীশ্বরের অনুগত হইতে বলিয়াছি; মানসিংহের আনুগত্য করিতে বলি নাই।”