পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৪
দুর্গেশনন্দিনী

 বিমলা কহিলেন, “তোর সে কথায় কাজ কি?”

তি। সত্য বল না কোথায় যাবে?
বি। আমি যে কোথায় যাব, তােমাকে কে বলিল?

 তিলােত্তমা অপ্রতিভ হইলেন। বিমলা তাঁহার লজ্জা দেখিয়া সকরুণে ঈষৎ হাসিয়া কহিলেন,—“আমি অনেক দূর যাব।”

 তিলােত্তমার দুখ প্রফুল্লপদ্মের ন্যায় হর্ষবিকষিত হইল। মৃদুস্বরে জিজ্ঞাসা করিলেন,—“কোথা যাবে?”

 বিমলা সেইরূপ মুখ টিপিয়া হাসিতে হাসিতে কহিলেন,—“আন্দাজ কর না।”

 তিলােত্তমা তাঁহার মুখপানে চাহিয়া রহিলেন।

 বিমল তখন তাঁহার ধারণ করি, “শুন দেখি” বলি গবাক্ষের নিকটএইয়া গেলেন। তথায় কাণে কাণে কহিলেন,—“আমি শৈলেশ্বর-মন্দিরে যাব; তথায় কোন রাজপুত্রের সহিত সাক্ষাৎ হইবে।”

 তিলোত্তমার শরীর রােমাঞ্চিত হইল। কিছুই উত্তর করিলেন না।

 বিশলা বলিতে লাগিলেন, “অভিরাম ঠাকুরের সঙ্গে আমার কথা হইয়াছিল; ঠাকুরের বিবেচনায় জগৎসিংহের সহিত তােমার বিবাহ হইতে পারে না। তােমার বাপ কোন মতে সম্মত হইবেন না। তাঁর সাক্ষাতে এ কথা পাড়িলে ঝাঁটা লাথি না খাই ত বিস্তর।”

 “তবে কেন?”—তিলােত্তমা অধোবদনে, অস্ফূটস্বরে, পৃথিবী পানে চাহিয়া এই দুইটি কথা বলিলেন,—“তবে কেন?”

 বি। কেন? আমি রাজপুত্রের নিকট স্বীকার করিয়া আসিয়াছিলাম, আজ রাত্রে তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিয়া পরিচয় দিব। শুধু পরিচয় পাইলে কি হইবে? এখন ত পরিচয় দিই, তার পর তাঁহার