পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বীরপঞ্চমী
৮৫

দৃষ্টির অগােচর হইলেই সে ব্যক্তি বৃক্ষমূলে শব্দশীল চর্মপাদুকা ত্যাগ করিয়া শনৈঃশনৈঃ পদবিক্ষেপে গবাক্ষ-সন্নিধানে আসিল। প্রথমে গবাক্ষের মুক্ত পথে কক্ষমধ্যে দৃষ্টিপাত করিল, কক্ষমধ্যে কেহ নাই দেখিয়া, নিঃশব্দে প্রবেশ করিল। পরে সেই কক্ষের দ্বার দিয়া অন্তঃপুর-মধ্যে প্রবেশ করিল।

 এদিকে রাজপুত্ত্র বিমলার নিকট বর্শা পাইয়া পূর্ব্ববৎ বৃক্ষরোহণ করিলেন, এবং পূর্ব্বলক্ষিত বৃক্ষে দৃষ্টিপাত করিলেন; দেখিলেন যে, এক্ষণে একটি মাত্র উষ্ণীষ দেখা যাইতেছে, দ্বিতীয় ব্যক্তি তথায় নাই; রাজপুত্ত্র একটি বর্শা বাম করে রাখিয়া দ্বিতীয় বর্শা দক্ষিণ করে গ্রহণ-পূর্ব্বক বৃক্ষস্থ উষ্ণীষ লক্ষ্য করিলেন। পরে বিশাল-বাহুবল-সহযােগে বর্শা নিক্ষেপ করিলেন; তৎক্ষণাৎ প্রথমে বৃক্ষপল্লবের প্রবল মর্ম্মর-শব্দ, তৎপরেই ভূতলে গুরুপদার্থের পতন-শব্দ হইল; উষ্ণীস আর বৃক্ষে নাই। রাজপুত্ত্র বুঝিলেন যে, তাঁহার অব্যর্থ সন্ধানে উষ্ণীষধারী বৃক্ষশাখাচ্যুত হইয়া ভূতলে পড়িয়াছে।

 জগৎসিংহ দ্রুতগতি বৃক্ষ হইতে অবতরণ করিয়া, যথা আহত ব্যক্তি পতিত হইয়াছে, তথা গেলেন; দেখিলেন যে, একজন সৈনিক-বেশধারী সশস্ত্র মুসলমান মৃতবৎ পতিত হইয়া রহিয়াছে। বর্শা তাহার চক্ষুর পার্শ্বে বিদ্ধ হইয়াছে।

 রাজপুত্ত্র মৃতবৎ দেহ নিরীক্ষণ করিয়া দেখিলেন যে, একবারে প্রাণবিয়োগ হইয়াছে। বর্শা চক্ষুর পার্শ্বে বিদ্ধ হইয়া তাহার মস্তিষ্ক ভেদ করিয়াছে। মৃতব্যক্তির কবচমধ্যে একখানা পত্র ছিল: তাহার অল্পভাগ বাহির হইয়াছিল। জগৎসিংহ ঐ পত্র লইয়া জ্যোৎস্নায় আনিয়া পাঠ করিলেন। তাহাতে এইরূপ লেখা ছিল—