পাতা:দৃষ্টিপ্রদীপ - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পাঠশালা খুলবার পরে প্রায় দু-বছর কেটে গিয়েছে। ভাদ্র মাস। বেশ শরতের রোদ ফুটেছে। বর্ষার মেঘ আকাশে আর দেখা যায় না। একদিন আমি পাঠশালায় গিয়েছি, একটা ছোট মেয়ে বলছে-মাস্টার মশায়, পেনো হিরণদিদির হাত আঁচড়ে কামড়ে নিয়েছে, ওই দেখুন ওর হাতে রক্ত পড়ছে। যে মেয়েটির হাত আঁচড়ে নিয়েছে তার নাম হিরন্ময়ী, বয়স হবে বছর চৌদ্দ, পাঠশালার কাছেই ওদের বাড়ি-কিন্তু মেয়েটি আমার পাঠশালায় ভৰ্ত্তি হয়েছে বেশী দিন নয়। ওর বাবার নাম কালীনাথ গাঙ্গুলী, তিনি কোথাকার আবাদের নায়েব, সেইখানেই থাকেন, বাড়িতে খুব কমই আসেন। আমি লক্ষ্য করেছি। এই মেয়েটি সকলের চেয়ে সজীব, বুদ্ধিমতী, অত্যন্ত চঞ্চল। সকলের চেয়ে সে বয়সে বড়, সকলের চেয়ে সভ্য ও শৌখীিন। কিন্তু তার একটা দোষ, কেমন একটু উদ্ধত স্বভাবের মেয়ে । একদিন কি একটা অস্ক ওকে দিলাম, সবাইকে দিলাম। ওর অঙ্কটা ভুল গেল। বললাম —তুমি অঙ্কটা ভুল করলে হিরণ ? অঙ্কটা ভুল গিয়েছে শুনে বোধ হয় ওর রাগ হ’ল---আর দেখেছি সব সময়, অপর কারোর সামনে বকুনি খেলে ক্ষেপে ওঠে। খুব সম্ভব সেই জন্যই ও ব্রাগের সুরে বললে—কোথায় ভুল ? কিসের ভুল ব’লে দিন না ? আমি বললাম-কাছে এস, অতদূর থেকে কি দেখিয়ে দেওয়া যায় ? আমি দেখে আসছি যে কদিন ও এসেছে, আমার কাছ থেকে দূরে বসে। ও উদ্ধতভাবে বললে-কেন। ওখান থেকেই বলুন না ? আপনার কাছে কেন যাব ? আমার মনে হ’ল ও বড় মেয়ে ব’লে আমার কাছে আসতে বোধ হয়। সঙ্কোচ অনুভব করে । কিন্তু তার জন্যে ওরকম উদ্ধত সুর কেন ? বললাম-কাছে এসে আঁক দেখে নিতে দোষ यitछ किई ? ও বললে-সে-সব কথার কি দরকার আছে ? আপনি দিন অঙ্ক ওখান থেকেই ঝিয়ে । রাগে ও বিরক্তিতে আমার মন ভ’রে উঠল। আচ্ছা মেয়ে তো ? মাস্টারদের সঙ্গে থাবাৰ্ত্তার এই কি ধরন ? আর আমায় যখন এত অবিশ্বাস তখন আমার স্কুলে না এলেই ত হয় ? সেদিন আমি ওর সঙ্গে আর কোন কথাই বললাম না। পরদিনও তাই, স্কুলে এল, নিজে ব’সে ব’সে কি লিখলে বই দেখে, একটা কথাও কইলাম না। ছুটির কিছু আগে আমায় ললে-আমার ইংব্রিজিটা একবার ধরুন না ? আমি ওর পড়াটা নিয়ে তারপর শান্তভাবে বললাম-হিরণ, তোমার বাড়িতে ব’লে, আমি 3 QO