প্রফুল্ল জিজ্ঞাসা করিল, কবে যাচ্ছেন তিনি?
জানিনে!
কোথায় যাচ্ছেন তিনি?
তাও জানিনে।
প্রফুল্ল কহিল, জেনেও ত কোন লাভ নেই দাদা। সহসা তাহার মুখের চেহারা বদলাইয়া গেল, কহিল বাপ রে! মেয়েমানুষ ত নয়, যেন পুরুষের বাবা। মন্দিরে দাঁড়িয়ে সেদিন অনেকক্ষণ চেয়েছিলাম, মনে হল, যেন পা থেকে মাথা পর্যন্ত একেবারে পাথরে গড়া। ঘা মেরে গুঁড়ো করা যাবে, কিন্তু আগুনে গলিয়ে যে ইচ্ছেমত ছাঁচে ঢেলে গড়বেন, সে বস্তুই নয়। পারেন ত মতলবটা পরিত্যাগ করবেন।
জীবানন্দ কতকটা বিদ্রূপের ভঙ্গীতে প্রশ্ন করিল, তা হলে প্রফুল্ল এবার নিতান্তই যাচ্চে?
প্রফুল্ল সবিনয়ে জবাব দিল, গুরুজনের আশীর্বাদের জোর থাকে ত মনস্কামনা সিদ্ধ হবে বৈ কি।
জীবানন্দ কহিল, তা হতে পারে। কিন্তু কি করবে স্থির করেচ?
প্রফুল্ল বলিল, অভিলাষ ত আপনার কাছে ব্যক্ত করেছি। প্রথমে চারটি ডালভাতের যোগাড়ের চেষ্টা করব।
জীবানন্দ কয়েক মুহূর্ত নীরবে থাকিয়া প্রশ্ন করিল, ষোড়শী সত্যই চলে যাবে তোমার মনে হয়?
প্রফুল্ল কহিল, হয়। তার কারণ, সংসারে সবাই প্রফুল্ল নয়। ভাল কথা দাদা, একটা খবর আপনাকে দিতে ভুলেছিলাম। কাল রাত্রে নদীর ধারে বেড়াচ্ছিলাম, হঠাৎ দেখি সেই ফকিরসাহেব। আপনাকে যিনি একদিন তার বটগাছে ঘুঘু শিকার করতে দেননি―বন্দুক কেড়ে নিয়েছিলেন তিনি। কুর্নিশ করে কুশলপ্রশ্ন করলাম, ইচ্ছে ছিল মুখরোচক দুটো খোশামোদ-টোশামোদ করে যদি একটা কোন ভালরকমের ওষুধ-টষুধ বার করে নিতে পারি ত আপনাকে ধরে পেটেণ্ট নিয়ে বেচে দু’পয়সা রোজগার করব। কিন্তু ব্যাটা ভারী চালাক, সেদিক দিয়েই গেল না। কথায় কথায় শুনলাম তাঁর ভৈরবী মাকে দেখতে এসেছিলেন, এখন চলে যাচ্ছেন। ভৈরবী যে সমস্ত ছেড়ে যাচ্চেন, তাঁর কাছেই শুনতে পেলাম।
জীবানন্দ কৌতূহলী হইয়া উঠিল, কহিল, এর সদুপদেশেই বোধ করি তিনি চলে যাচ্ছেন?
প্রফুল্ল ঘাড় নাড়িয়া বলিল, না। বরঞ্চ এঁর উপদেশের বিরুদ্ধেই তিনি চলে যাচ্ছেন।
জীবানন্দ উপহাস করিয়া কহিল, বল কি প্রফুল্ল, ফকিরসাহেব শুনি যে তার গুরু। গুরু-আজ্ঞা লঙ্ঘন?
প্রফুল্ল কহিল, এ ক্ষেত্রে তাই বটে!
কিন্তু এতবড় বিরাগের হেতু?
১৪৩