জীবানন্দ হাঁক দিয়া ডাকিল, মহাবীর―
ষোড়শী আতঙ্কে কাঁপিয়া উঠিয়া বলিল, আমাকে আপনি মেরে ফেলতে পারবেন, কিন্তু―
জীবানন্দ কহিল, আচ্ছা ও বাহাদুরি কর গে ওদের ঘরে গিয়ে, মহাবীর―
ষোড়শী মাটিতে লুটাইয়া পড়িয়া কাঁদিয়া বলিল, কারও সাধ্য নেই আমাকে প্রাণ থাকতে নিয়ে যেতে পারে।
আমার যা-কিছু দুর্দশা, যত অত্যাচার আপনার সামনেই হোক―আপনি আজও ব্রাহ্মণ, আপনি আজও ভদ্রলোক।
কিন্তু এতবড় অভিযোগেও জীবানন্দ হাসিল; সে হাসি যেমন কঠিন তেমনি নিষ্ঠুর। কহিল, তোমার কথাগুলো শুনতে মন্দ নয়, কিন্তু কান্না দেখে আমার দয়া হয় না। ও আমি অনেক শুনি। মেয়েমানুষের ওপর আমার এতটুকুও লোভ নেই―ভাল না লাগলেই চাকরদের দিয়ে দিই। তোমাকে দিয়ে দিতুম, শুধু, এই বোধ হয় আজ প্রথম একটু মোহ জন্মেছে। ঠিক জানিনে―নেশা না কাটলে ঠাওর পাচ্চিনে।
মহাবীর দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত হইয়া সাড়া দিল, হুজুর।
জীবানন্দ সম্মুখের কবাটটায় অঙ্গলি নির্দেশ করিয়া বলিল, একে আজ রাত্রের মত ও-ঘরে বন্ধ করে রেখে দে। কাল আবার দেখা যাবে।
ষোড়শী গলদশ্রুনয়নে কহিল, আমার সর্বনাশটা একবার ভেবে দেখুন হুজুর। কাল যে আমি আর মুখ দেখাতে পারবো না।
জীবানন্দ কহিল, দু-এক দিন। তারপরে পারবে। সেই লিভারের ব্যথাটা আজ ভারী বেড়েচে―আর বেশী বিরক্ত করো না―যাও।
মহাবীর তাড়া দিয়া বলিল, আরে ওঠ্ না মাগী―চোল্।
কিন্তু তাহার কথা শেষ না হইতেই অকস্মাৎ উভয়েই চমকিয়া উঠিল। জীবানন্দ ভয়ানক ধমক দিয়া কহিল, খবরদার শুয়োরের বাচ্চা, ভাল করে কথা বল। ফের যদি কখনো আমার হুকুম ছাড়া কোনো মেয়েমানুষকে ধরে আনিস ত গুলি করে মরে ফেলব। বলিতে বলিতেই মাথার বালিশটা তাড়াতাড়ি পেটের নীচে টানিয়া লইয়া উপুড় হইয়া শুইয়া পড়িল, এবং যাতনায় একটা অস্ফুট আর্তনাদ করিয়া কহিল, আজকের মত ও-ঘরে বন্ধ থাকো, কাল তোমার সতীপনার বোঝাপড়া হবে। এই―যা না আমার সুমুখ থেকে সরিয়ে নিয়ে।
মহাবীর আস্তে আস্তে বলিল, চলিয়ে―
ষোড়শী নিরুত্তরে উঠিয়া দাঁড়াইয়া নির্দেশমত পাশের অন্ধকার ঘরে প্রবেশ করিতে যাইতেছিল, হঠাৎ তাহার নাম ধরিয়া ডাকিয়া জীবানন্দ কহিল, একটু দাঁড়াও―তুমি পড়তে জানো, না?
ষোড়শী মৃদুকণ্ঠে বলিল, জানি।
জীবানন্দ কহিল, তা হলে একটু কাজ করে যাও। ঐ যে বাক্সটা―ওর মধ্যে
১৭
দেঃ পাঃ―২