এই সময় দেবদাস অন্যদিকে মুখ ফিরাইয়া শুইয়া পড়িল। অল্পক্ষণেই চুনিলাল দেখিল, দেবদাস ঘুমাইয়া পড়িয়াছে। এমনি করিয়া ঘুমাইয়া ঘুমাইয়া আরও দুইদিন অতীত হইল। তৃতীয় দিবসের প্রাতঃকালে দেবদাস সুস্থ হইয়া উঠিয়া বসিল। মুখ হইতে সেই ঘন ছায়া যেন অনেকটা সরিয়া গিয়াছে বলিয়া বোধ হইল। চুনিলাল জিজ্ঞাসা করিল, আজ শরীর কেমন?
বোধ হয় অনেকটা ভাল। আচ্ছা চুনিবাবু, রাত্রে তুমি কোথায় যাও?
আজ চুনিলাল লজ্জিত হইল; বলিল, হাঁ, তা যাই বটে, কিন্তু সে কথা কেন?
আচ্ছা,—আর তুমি কেন কলেজে যাও না?
না—লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েচি।
ছিঃ, তা কি হয়? মাস-দুই পরে তোমার পরীক্ষা। পড়াও তোমার মন্দ হয়নি, এবার কেন পরীক্ষা দাও না!
না—পড়া ছেড়ে দিয়েচি।
চুনিলাল চুপ করিয়া রহিল। দেবদাস পুনরায় জিজ্ঞাসা করিল, কোথায় যাও—বলবে না? তোমার সঙ্গে আমিও যাবো।
চুনিলাল দেবদাসের মুখপানে চাহিয়া বলিল, কি জান দেবদাস, আমি খুব ভাল জায়গায় যাইনে।
দেবদাস যেন আপনার মনে কহিল, ভাল আর মন্দ! ছাই কথা!—চুনিবাবু, আমাকে সঙ্গে নেবে না?
তা নিতে পারি। কিন্তু তুমি যেয়ো না।
না, আমি যাবই। যদি ভাল না লাগে, আর না হয় যাব না। কিন্তু তুমি যে সুখের আশায় প্রত্যহ উন্মুখ হয়ে থাকো—যাই হোক চুনিবাবু, আমি নিশ্চয়ই যাবো।
চুনিলাল মুখ ফিরাইয়া একটু হাসিল; মনে মনে বলিল, আমার দশা! মুখে বলিল, আচ্ছা, তাই যেয়ো।
অপরাহ্নবেলায় ধর্মদাস জিনিসপত্র লইয়া উপস্থিত হইল। দেবদাসকে দেখিয়া কাঁদিয়া ফেলিল। দেব্তা, আজ তিন-চারদিন ধরে মা কত যে কাঁদচেন—
কেন রে?
কিছু না বলে হঠাৎ চলে এলে কেন? একখানা পত্র বাহির করিয়া হাতে দিয়া কহিল, মার চিঠি।