পাতা:দেবী চৌধুরানী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৩২ ৷ দেবী চৌধুরাণী - হরবল্পভের গা কঁাপিল। সে সন্ধ্যা-আহ্নিকের সব মন্ত্র ভুলিয়া গেল। সন্ধ্যাহিক ভাল হইল না। - রঙ্গরাজ জঙ্গলে সাহেবকে লইয়া গিয়া বলিল, “আমরা কাহাকে ফঁাসি দিই না । তুমি ঘরের ছেলে ঘরে যাও, আমাদের পিছনে আর লেগে না । তোমাকে ছাড়িয়া দিলাম।” সাহেব প্রথমে বিস্ময়াপন্ন হইল—তার পর ভাবিল, “ইংরেজকে ফঁাসি দেয়, বাঙ্গালীর এত কি ভরসা ?” তার পর রঙ্গরাজ বলিল, “সাহেব ! রঙ্গপুর অনেক পথ, যাবে কি প্রকারে " সাহেব । যে প্রকারে পারি। রঙ্গ। নৌকা ভাড়া কর, নয় গ্রামে গিয়া ঘোড়া কেন—নয় পান্ধী কর । তোমাকে আমাদের রাণী এক শত মোহর পথখরচ দিয়াছেন । রঙ্গরাজ মোহর গণিয়া দিতে লাগিল । সাহেব পাচ থান মোহর লইয়। আর লইল না। বলিল, “ইহাতেই যথেষ্ট হইবে । এ আমি কর্জ লইলাম।” . রঙ্গরাজ। আচ্ছ, আমরা যদি তোমার কাছে আদায় করতে যাই ত শোধ দিও। আর তোমার সিপাহী যদি কেহ জখম হইয়া থাকে, তবে তাহাকে পাঠাইয়া দিও। যদি কেহ মরিয়া থাকে, তবে তাদের ওয়ারেশকে পাঠাইয়া দিও। সাহেব । কেন ? রঙ্গ। এমন অবস্থায় রাণী কিছু কিছু দান করিয়া থাকেন। সাহেব বিশ্বাস করিল না। ভাল মন্দ কিছু না বলিয়া চলিয়া গেল। রঙ্গরাজ তখন পান্ধী বেহারার সন্ধানে গেল। তার প্রতি সে আদেশও ছিল। দশম পরিচ্ছেদ এদিকে পথ সাফ দেখিয়া, ব্রজেশ্বর ধীরে ধীরে দেবীর কাছে আসিয়া বসিলেন। দেবী বলিল, “ভাল হইল, দেখা দিলে। তোমার কথা ভিন্ন আজিকার কাজ হয় না। তুমি প্রাণ রাখিতে হুকুম দিয়াছিলে, তাই প্রাণ রাখিয়াছি। দেবী মরিয়াছে, দেবী চৌধুরাণী আর নাই। কিন্তু প্রফুল্ল এখনও আছে। প্রফুল্ল থাকিবে, না দেবীর সঙ্গে যাইবে ?” ব্ৰজেশ্বর আদর করিয়া প্রফুল্লের মুখচুম্বন করিল। বলিল, “তুমি আমার ঘরে চল, ঘর আলো হইবে। তুমি না যাও—আমি যাইব না।”