নবম অধ্যায়।—জ্ঞানার্জনী বৃত্তি। শিয়। শারীরিক বৃত্তির অনুশীলন সম্বন্ধে কিছু উপদেশ পাইয়াছি, এক্ষণে জ্ঞানার্জনী বৃত্তির অনুশীলন সম্বন্ধে কিছু শুনিতে ইচ্ছা করি। আমি যত দূর বুঝিয়াছি, তাহা এই যে, অন্যান্য বৃত্তির স্থায় এ সকল বৃত্তির অনুশীলনে সুখ, ইহাই ধৰ্ম্ম। অতএব জ্ঞানার্জনী বৃত্তি সকলের অনুশীলন এবং জ্ঞানোপার্জন করিতে হইবে। গুরু । ইহা প্রথম প্রয়োজন। দ্বিতীয় প্রয়োজন, জ্ঞানোপার্জন ভিন্ন অন্ত বৃত্তির সম্যক অনুশীলন করা যায় না। শারীরিক বৃত্তির উদাহরণদ্বারা ইহা বুঝাইয়াছি। ইহা ভিন্ন তৃতীয় প্রয়োজন আছে। তাহ বোধ হয়, সৰ্ব্বাপেক্ষ গুরুতর। জ্ঞান ভিন্ন ঈশ্বরকে জানা যায় না। ঈশ্বরের বিধিপূর্বক উপাসনা করা যায় না। শিস্য। তবে কি মূখের ঈশ্বরোপাসনা নাই ? ঈশ্বর কি কেবল পণ্ডিতের জন্য ? গুরু। মূর্থের ঈশ্বরোপাসনা নাই। মূর্থের ধৰ্ম্ম নাই বলিলে অত্যুক্তি হয় না। পৃথিবীতে যত জ্ঞানকৃত পাপ দেখা যায়, সকলই প্রায় মূখের কৃত। তবে একটা ভ্রম সংশোধন করিয়া দিই। যে লেখা পড়া জানে না, তাহাকেই মূৰ্খ বলিও না। আর যে লেখা পড়া করিয়াছে, তাহাকেই জ্ঞানী বলিও না। জ্ঞান, পুস্তকপাঠভিন্ন অন্য প্রকারে উপার্জিত হইতে পারে ; জ্ঞানার্জনী বৃত্তির অনুশীলন বিদ্যালয় ভিন্ন অন্যত্র হইতে পারে। আমাদের দেশের প্রাচীন স্ত্রীলোকেরা ইহার উত্তম উদাহরণস্থল। তাহারা প্রায় কেহই লেখা পড়া জানিতেন না, কিন্তু তাহাদের মত ধাৰ্ম্মিকও পৃথিবীতে বিরল। কিন্তু তাহারা বহি না পড়ন, মূৰ্খ ছিলেন না। আমাদের দেশে জ্ঞানোপার্জনের কতকগুলি উপায় ছিল, যাহা এক্ষণে লুপ্তপ্রায় হইয়াছে। কথকতা ইহার মধ্যে একটি। প্রাচীনারা কথকের মুখে পুরাণেতিহাস শ্রবণ করিতেন। পুরাণেতিহাসের মধ্যে অনন্ত জ্ঞান ভাণ্ডার নিহিত আছে। তচ্ছ বণে র্তাহাদিগের জ্ঞানার্জনী বৃত্তি সকল পরিমার্জিত ও পরিতৃপ্ত হইত। তদ্ভিন্ন আমাদিগের দেশে হিন্দুধর্মের মাহায্যে পুরুষপরম্পরায় একটি অপূৰ্ব্ব জ্ঞানের স্রোত চলিয়া আসিতেছিল। র্তাহারা তাহার অধিকারিণী ছিলেন। এই সকল উপায়ে তাহার শিক্ষিত বাবুদিগের অপেক্ষ অনেক বিষয় ভাল বুঝিতেন। উদাহরণস্বরূপ অতিথিসৎকারের কথাটা ধর । অতিথিসৎকারের মাহাত্ম্য জ্ঞানলভ্য ; জাগতিক সত্যের সঙ্গে ইহা সম্বন্ধবিশিষ্ট। আমাদের শিক্ষিত সম্প্রদায় অতিথির নামে জলিয়া উঠেন ; ভিখারী দেখিলে লাঠি দেখান। কিন্তু যে জ্ঞান ইহাদের নাই, প্রাচীনাদের ছিল ; তাহারা
পাতা:ধর্ম্মতত্ত্ব-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৫৯
অবয়ব