পাতা:ধর্ম্মব্যাখ্যা (প্রথম পর্ব্ব).djvu/১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ধৰ্ম্মব্যাখ্যা । স্থলজড়পদার্থের জ্ঞান উন্নত হইতেছে, সূক্ষ্মতত্ত্বের জ্ঞান সেই পরিমাণেই ক্ষীণ ও মলিন হইয়া আসিতেছে ; স্থল জ্ঞানোন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের স্বক্ষদর্শন শক্তির হ্রাস হইয়া যাইতেছে ; জ্ঞান স্থলভাব ধারণ করিতেছে। এখন চিন্তাশক্তির গতি স্থলাভিমুখী ; স্থলভাবকে অবলম্বন করিয়াই চিন্ত৷ পৰ্য্যবসিত হইতেছে ; স্থলই মনের বিশ্রাম-গৃহ, মন এখন স্থল বিষয় ব্যতীত আর কিছুই জানিতে চায় না, কোন স্বক্ষ বিষয় চিন্তা করিতে গেলেই যেন মস্তিষ্ক ও মন নিতান্ত কাতর ও স্নান হইয়া পড়ে, সুতরাং সূক্ষ্মচিন্তা বিরক্তিজনক ও পরিহার্য্য বলিয়, বোধ হয়। অতএব এ উন্নতি আমাদের প্রকৃত উন্নতি বা কল্যাণসাধক বলিয়া স্বীকার করিতে আমরা প্রস্তুত নহি। ইহা পক্ষাঘাত রোগের ন্যায় মনের একাঙ্গ ক্ষীণ ও ক্রিয়াশক্তি-বিহীন করিয়া অপরাদ্ধের পুষ্টি সাধন করিতেছে। বাস্তবিক দেখিতে গেলে স্থল এবং স্বক্ষ এতদুভয়বিধ চিন্তাই মনের অঙ্গদ্বয়। এই উভয় চিন্তার বিষয়ও বিভিন্ন প্রকার। স্থল চিন্তার বিষয় ভৌতিক জগৎ, স্তন্ম চিন্তার বিষয় অধ্যাত্ম জগৎ, আবার উভয় চিন্তার ফলও পৃথকবিধ । ভৌতিক চিন্তার ফল ভৌতিক জগতে, অধ্যাত্ম চিন্তার ফল অধ্যাত্ম জগতে। অর্থাৎ শরীর, মন, বুদ্ধি ও আত্মার প্রকৃত কল্যাণসাধনই অধ্যাত্মচিন্তার মুখ্য ফল। কিন্তু দুর্ভাগ্য সমাজ সেই অধ্যাত্ম চিন্তায়ই সম্পূর্ণ উদাসীন। যাহার তৃপ্তি সাধনের নিমিত্ত, যে আত্মার সন্তোষ উপহারের নিমিত্ত, জন্মাবধি মরণ পর্য্যন্ত এত আয়াস, এত পরিশ্রম, এত অপমান, এত গ্লানি স্বীকার, সেই আত্মার বিষয় চিন্তা,—সেই অধ্যাত্ম জগতের চিন্তাই সমাজের উপেক্ষিত বিষয় হইয়াছে ! এই নিমিত্তই সমাজের ঈদৃশ দুরবস্থা, নানাপ্রকার আধি ব্যাধি দ্বারা সমাজ প্রপীড়িত ; সুখ, শান্তি, স্বচ্ছন্দতা সমাজ হইতে বিলুপ্তপ্রায় ;-ভারতসমাজ হাহাকারে পরিপূর্ণ : যত দিন উভয়বিধ চিন্তাশক্তির গতি সমস্বত্রে উন্নতির দিকে প্রবাহিত না হইবে, ততদিন আমাদের প্রকৃত কল্যাণ কদাচ সম্ভাবিত নহে। অধ্যাত্ম জগতে চিন্তনীয় বিষয়ের মধ্যে ‘ধৰ্ম্ম একটা মুখ্যতম বিষয়। কিন্তু দুর্ভাগ্লোর বিষয় এই যে, এই মুখ্য বিষয়টাতেই সমাজের যাদৃশ অবহেলা পরিলক্ষিত হয়, এমন তার কোনটীতেই নয়। -