পাতা:ধুস্তুরী মায়া ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/১১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বদন চৌধুরীর শোকসভা
১০৭

 —ও খবর পেলে কি করে যে আজ শোকসভা হবে?

 —খবরের অভাব কি ধর্মরাজ, রোজ কত লোক মরছে আর সোজা নরকে চলে আসছে। তাদের কাছ থেকেই খবর পেয়েছে।

 যম আজ্ঞা দিলেন, বেশ, দু ঘণ্টার জন্য ওকে ছেড়ে দাও, সঙ্গে একজন প্রহরী থাকে যেন।

 চিত্রগুপ্ত হাঁক দিয়ে বললেন, ওহে কাকজঙ্ঘ, তুমি এই পাপীর সঙ্গে মর্তলোকে যাও। দেখো যেন নতুন পাপ কিছু না করে। ঠিক দশ ঘণ্টা পরেই ফেরত আনবে।

 যে আজ্ঞে বলে যমদূত কাকজঙ্ঘ বদন চৌধুরীর হাত ধরে যমালয় থেকে বেরিয়ে গেল।

 অনন্তর যমরাজ অন্য এক মহলে এলেন। তাঁকে দেখে ঘনশ্যাম ঘোষাল কৃতাঞ্জলিপুটে দণ্ডবৎ হলেন।

 যম বললেন, তোমার আবার কি চাই?

 —আজ্ঞে, দু ঘণ্টার জন্যে ছুটি। একবার মর্ত্যলোকে যেতে চাচ্ছি।

 —তোমারও শোকসভা হবে নাকি? এখানে এসেছ কবে?

 —দু বছর হল এখানে এসেছি, রৌরবে থ-বিভাগে আছি। আমার জন্যে কেউ শোকসভা করে নি প্রভু। বন্ধুরা বড়ই নিমকহারাম, আমার মৃত্যুর পর আমারই ‘কালকেতু’ কাগজে মোটে আধ কলম ছেপেছিল, একটা ভাল ছবি পর্যন্ত দেয় নি। বদন চৌধুরী আমার বন্ধু ছিলেন, তাঁরই শোকসভায় যাবার জন্য ছুটি চাচ্ছি।

 চিত্রগুপ্ত তাঁর খাতা দেখে বললেন, তুমি অতি পাজী প্রেত, যমালয়ে এসেও মিছে কথা বলছ। তোমার কাগজে তো চিরকাল বদন চৌধুরীকে গালাগাল দিয়েছ।

 —আজ্ঞে, সম্পাদকের কঠোর কর্তব্য হিসেবে তা করতে হয়েছে।