পাতা:ধুস্তুরী মায়া ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/১১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১০
ধুস্তুরী মায়া

—আকাশের গায়ে সোনালী আঁচড়। কিসের দাগ ওটা? দিব্যরথের টায়ারের কর্ষণ। ওই সড়কে বদনচন্দ্র দেবযানে গেছেন। কে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে? উর্বশী না আফ্রোদিতি?... ইত্যাদি।

 আরও কয়েক জন বক্তৃতা দেবার পর ব্যারিস্টার কোকিল সেন দাঁড়ালেন। পূর্বের বক্তারা যেটুকু বাকী রেখেছিলেন তা নিঃশেষে বিবৃত করে ইনি বললেন, আমি প্রস্তাব করছি, সেই স্বর্গগত মহাপুরুষের একটি মর্মরমমূর্তি দেশবন্ধু বা দেশপ্রিয় পার্কে স্থাপন করা হক, এবং তদুদ্দেশ্যে চাঁদা তোলা আর অন্যান্য ব্যবস্থার জন্য অমুক অমুক অমুককে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হক।

 পিছনের বেঞ্চ থেকে একজন শ্রোতা বললেন, বদন চৌধুরীকে আমরা বিলক্ষণ জানতুম। মরা মানুষের নিন্দে করতে চাই না, কিন্তু তার মূর্তির জন্য আমরা কেউ এক পয়সা চাঁদা দেব না।

 সভায় হাততালি হল, প্রথমে অল্প, যেন ভয়ে ভয়ে, তার পব খুব জোরে। গোলমাল থামলে কোকিল সেন বললেন, আমরা অশ্রদ্ধার দান চাই না, মৃত মহাপরুেষের পুত্রগণই সব খরচ দেবেন।

 বেদীর উপর থেকে একজন আস্তে আস্তে বললেন, হিয়ার হিয়ার।

 অতঃপর সভাপতি গোবর্ধন মিত্রের বক্তৃতার পালা। জজিয়তির সময় তিনি লম্বা লম্বা রায় দিয়েছেন, দু-চারটে ফাঁসির হুকুমও তাঁর মুখ থেকে বেরিয়েছে। কিন্তু সভায় কিছু বলতে গেলেই তিনি নার্ভাস হয়ে পড়েন। তাঁর বক্তব্য কোকিল সেনই লিখে দিয়েছেন। গোবর্ধনবাবু দাঁড়িয়ে উঠে তাঁর ভাষণটি পড়বার উপক্রম করছেন, এমন সময় হঠাৎ ঘনশ্যাম ঘোষাল তড়াক করে লাফিয়ে তাঁর কাঁধে চড়লেন। যমদূত ভৃঙ্গরোল আটকাতে গেল, কিন্তু ঘনশ্যাম নিমেষের মধ্যে গোবর্ধনবাবুর কানের ভিতর দিয়ে তাঁর মরমে প্রবেশ করলেন।