পাতা:ধুস্তুরী মায়া ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/১৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭৮
ধুস্তুরী মায়া

 বিভীষণ বললেন, একজন পাশ্চাত্ত্য পণ্ডিত (T. H. Huxley) বলেছেন, নীতি হচ্ছে দু রকম, নিসর্গনীতি (cosmic law) আর ধর্মনীতি (moral law)। প্রথমটি বলে, আত্মরক্ষা আর স্বার্থসিদ্ধির জন্য পরের সর্বনাশ করা যেতে পারে। এই নীতি অনুসারেই লোকে মশা ইঁদুর সাপ বাঘ ইত্যাদি মারে, খাদ্যের জন্য জীবহত্যা করে, লক্ষ লক্ষ কীট বধ করে কৌষেয় বস্ত্র প্রস্তুত করে, সভ্য সবল জাতি অসভ্য দূর্বল জাতিকে পীড়ন বা সংহার করে, যুদ্ধকালে যে-কোনও উপায়ে বিপক্ষকে ধ্বংস করবার চেষ্টা করে। পক্ষান্তরে ধর্মনীতি বলে, স্বার্থসিদ্ধির জন্য কদাপি পরের অনিষ্ট করবে না, সকলকেই আত্মীয় মনে করবে। কিন্তু কেবল ধর্মনীতি অবলম্বন করে কি করে জীবনযাত্রা নির্বাহ করা যায়, স্বার্থ আর পরার্থ বজায় রাখা যায়, তার পদ্ধতি এখনও আবিষ্কৃত হয় নি। রাজনীতিক পণ্ডিতগণ অবস্থা বুঝে প্রথম বা দ্বিতীয় নীতির ব্যবস্থা করেন, সাধারণ মানুষও তাই করে। তবে ভবিষ্যদ‍্দর্শী মহাত্মারা আশা করেন যে মানবজাতি ক্রমশ নিসর্গনীতি বর্জন করে ধর্মনীতি আশ্রয় করবে। আমাদের এই ভগবান ভার্গব নিসর্গনীতি অনুসারেই একুশ বার ক্ষত্রিয় সংহার করেছিলেন।

 পরশ‍ুরাম বললেন, ঠিক করেছিলাম। সাধুদের পরিত্রাণ আর দুষ্কৃতদের বিনাশের জন্যই অবতাররা আসেন। তাঁরা চটপট ধর্মসংস্থাপন করতে চান, অগণিত দুর্বুদ্ধি পাপীকে উপদেশ দিয়ে সৎপথে আনবার সময় তাঁদের নেই। এখনকার লোকহিতৈষী যোদ্ধারা যদি অনূরূপ উদ্দেশ্যে নির্মম হয়ে যুদ্ধ করেন তাতে আমি দোষ দেখি না।

 অশ্বত্থামা বললেন, কিন্তু একাধিক প্রবল পক্ষ থাকলে নিসর্গনীতিও জটিল হয়ে পড়ে। সকলেই বলে, অন্যায় উপায়ে যুদ্ধ করা