পাতা:ধুস্তুরী মায়া ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভরতের ঝুমঝুমি
৫৩

 —বেশ, সেই আশীর্বাদ করছি। কিন্তু রাজা না থাকলে রাজকার্য চলবে কি করে?

 — আজকাল তা চলে। আধুনিক বিজ্ঞান বলে যে কর্তা না থাকলেও ক্রিয়া নিষ্পন্ন হয়।

 দুর্বাসা বললেন, আমি এখন উঠি। যাঁর জিনিস তাঁকে অর্পণ করে সত্বর দায়মুক্ত হয়ে ব্রহ্মলোকে যেতে চাই।

 —অর্পণ করবেন কাকে?

 —কেন, মহারাজ ভরতের বংশধর নেই?

 —কেউ নেই, ভরতবংশ অর্থাৎ যুধিষ্ঠির-পরীক্ষিতের বংশ লোপ পেয়েছে। তাঁদের যাঁরা উত্তরাধিকারী-নন্দ মৌর্য শঙ্খ অন্ধ্র গপ্ত প্রভৃতি, তার পর পাঠান মোগল ইংরেজ, এঁরাও ফৌত হয়েছেন। ভরতের রাজ্য এখন দু ভাগ হয়েছে, বড়টি ভারতীয় গণরাজ্য, ছোটটি ইসলামীয় পাকিস্থান।

 —একজন চক্রবর্তী রাজা আছেন তো?

 —এখন আর নেই, দুই রাজ্যে দুই রাষ্ট্রপতি বাহাল হয়েছেন, একজন দিল্লিতে আর একজন করাচিতে থাকেন। আইন অনুসারে এঁরাই ভরতের স্থলাভিষিক্ত, সুতরাং ঝুমঝুমিটি এঁদেরই হক পাওনা। কিন্তু দেবেন কাকে? একজনকে দিলে আর একজন ইউএন-ও-তে নালিশ করবেন, না হয় ঘুষি বাগিয়ে বলবেন, লড়কে লেংগে ঝুমঝুম্মা।

 দুর্বাসা ক্ষণকাল ধ্যানমগ্ন হয়ে রইলেন। তার পর মট্ করে ঝুমঝুমিটি ভেঙে বললেন, একজনকে দেব এই খোলটা, যাতে পাথরকুচি আছে, নাড়লে কড়রমড়র করে। আর একজনকে দেব এই ডাঁটিটা, ফুঁ দিলে পিঁ পিঁ করে। দাও তো গোটা দশ টাকা রাহাখরচ।

 টাকা নিয়ে দুর্বাসা তাড়াতাড়ি চলে গেলেন।

১৩৫৮