পাতা:ধুস্তুরী মায়া ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৬
ধুস্তুরী মায়া

বলিষ্ঠ বাহু, নীল চোখ, সিংহকেশরের মতন কটা রঙের চুল মুক্তামালা দিয়ে ঘেরা, তার এক পাশে একটি সারসের পালক গোঁজা। পরনে নীল ধুতি, গায়ে নীল উত্তরীয়, গলায় মল্লিকার মালা। কাঁধে বাঁশের লাঠি, তার উপর দিকে একটি সুমার্জিত লাঙ্গলের ফলা লাগানো, অস্তগামী সূর্যের কিরণে তা ঝকমক করছে।

 দীর্ঘাঙ্গী রেবতী উনিশ হাত উঁচু থেকে তাঁর ভাবী স্বামীকে যুগপৎ সতৃষ্ণ ও বিতৃষ্ণ নয়নে ক্ষণকাল নিরীক্ষণ করলেন। হা বিধাতা, এই একরত্তি পুরুষ তাঁর বর! এত সুন্দর কিন্তু এত ক্ষুদ্র! রেবতী কোনও রকমে নিজেকে সামলে নিলেন এবং শিষ্টাচার স্মরণ করে যুক্ত করে নমস্কার জানালেন।

 বলদেব স্মিতমুখে বললেন, ভদ্রে, আমাকে মনে ধরে?

 রেবতী উত্তর দিলেন, শুনেছি আপনি একজন অবতার, নারায়ণের অংশে জন্মেছেন। আমার মতন সামান্য নারী কি আপনার যোগ্য?

 বলদেব বললেন, অর্থাৎ আমিই তোমার যোগ্য নই। তুমি অতিকায়া মহামানবী, আমি ক্ষুদ্রদেহ মাণবক। তুমি উচ্চ তালতরু, আমি তুচ্ছ এরণ্ড। তুমি তেতলা সমান উঁচু, আর আমি একটা উইঢিপি। রেবতী, তুমি ভাবছ আমি তোমার নাগাল পাব কি করে। দুশ্চিন্তা ত্যাগ কর, আমি এখনই তোমার যোগ্য হব।

 এই বলে বলদেব একটু দূরে সরে দাঁড়ালেন এবং কাঁধ থেকে লাঙ্গলটি নামিয়ে তার দণ্ড ধরে বনবন করে ঘোরাতে লাগলেন। ঘোরার সঙ্গে সঙ্গে দণ্ডটি লম্বা হতে লাগল। একটু পরে কৃষ্ণ বললেন, ওই হয়েছে, আর ঘুরিও না দাদা। তখন বলদেব লাঙ্গলের ফলা রেবতীর কাঁধে আটকে বললেন, সুন্দরী, অপরাধ নিও না, এই লাঙ্গল আমার বাহুর প্রতিনিধি হয়ে তোমার কম্বুগ্রীবা আলিঙ্গন করছে।