পাতা:ধুস্তুরী মায়া ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৬
ধুস্তুরী মায়া

মেরে গালে নখ দিয়ে আঁচড়ে রক্তপাত করে দিলে। মাতঙ্গী রাগ সামলাতে পারলেন না, দূর হ লক্ষ্মীছাড়া বলে তাকে হাত-পাখা দিয়ে মারলেন। পেঁচা বিকট চ্যাঁ চ্যাঁ রব করে ঘর থেকে উড়ে কোথায় চলে গেল। মাতঙ্গী ব্যাকুল হয়ে চারিদিকে লোক পাঠালেন, কিন্তু পেঁচার কোনও খোঁজ পাওয়া গেল না।


র পরের ঘটনাবলী খুব দ্রুত। মুচুকুন্দর উত্থান গত পনের বৎসর ধরে ধীরে ধীরে হয়েছিল, কিন্তু এখন ঝুপ করে তাঁর পতন হল। কিছুকাল থেকে ফটকাবাজিতে তাঁর খুব লোকসান হচ্ছিল। সম্প্রতি তিনি যে দশ হাজার মন ঘি পাঠিয়েছিলেন, ভেজাল প্রমাণ হওয়ায় তার জন্য বিস্তর টাকা গচ্চা দিতে হল। তাঁর মুরুব্বী মেজর রবসন হঠাৎ বদলী হওয়াতেই এই বিপদ হল, তিনি থাকলে অতি রাবিশ মালও পাস করে দিতেন। মুচুকুন্দবাবুর কম্পানিগুলোরও গতিক ভাল নয়। এমন অবস্থায় ধুরন্ধর ব্যবসায়ীরা যা করে থাকেন তিনিও তাই করলেন, অর্থাৎ এক কারবারের তহবিল থেকে টাকা সরিয়ে অন্য কারবার ঠেকিয়ে রাখতে গেলেন। কিন্তু শত্রুরা তাঁর পিছনে লাগল। তার পর একদিন তাঁর ব্যাঙ্কের দরজায় তালা পড়ল, যথারীতি পুলিসের তদন্ত এবং খাতাপত্র পরীক্ষা হল, এক বৎসর ধরে মকদ্দমা চলল, পরিশেষে মুচুকুন্দ তহবিল তছরুপ জালিয়াতি ফেরেববাজি প্রভৃতির দায়ে জেলে গেলেন।

 মাতঙ্গী দেবী তাঁর ভাই তারাপদর কাছে আশ্রয় নিলেন। লখা আর সরা কোথায় থাকে কি করে তার স্থিরতা নেই। তারাপদবাবু বলেন, দিদি আর জামাইবাবু মস্ত ভুল করেছিলেন। পেঁচাটা লক্ষ্মীপেঁচাই নয়, নিশ্চয় হতুমপেঁচা, ভোল ফিরিয়ে এসেছিল।