পাতা:নরওয়ে ভ্রমণ.pdf/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬
নরওয়ে ভ্রমণ

 এখন যার যার গাড়ীতে চড়া। এবারে আবার সেই আদবকায়দা-দুরস্ত, দুইটি প্রশস্ত হস্ত প্রসারিত হইল। এবার হস্তদ্বয়ের আশ্রয় গ্রহণ করিতে, আর আমাদের পূর্ব্বের মত দ্বিধা-জড়িত ভাব নাই। ভাবিলাম, তাইত! “রূপেতে কি করে বাপু! গুণ যদি থাকে।” হউক না অমসৃণ অপরিচ্ছন্ন,— বিপন্নের বন্ধু ত বটে!

সকলেই বলিয়া থাকেন, ওঠায় আর নামায় স্বর্গ মর্ত্ত তফাৎ; সেটা কেবল কথার কথা নয়, কাজেও তাই। ওঠায় অনেক সময় অন্যের সাহায্য প্রয়োজন হয়, নামায় তাহা না হইলেও চলে। নামার মুখে অশ্বগণ, তাহাদিগের চালকদিগকে আরোহীদের পশ্চাতে আপন আপন স্থানে বসিতে অনুমতি দিল, কেন না স্বর্গ ছাড়িয়া মর্ত্তে নামিতে তারা নিজেরাই বেশ পটু। তবু যদি “নাম্‌কা ওয়াস্তে” একটা লাগাম রাখা দরকার হয়, তাতে তাদের আপত্তি নাই; কিন্তু সে লাগাম ঢিলা রাখা চাই। ‘হ’ক্ না হ’ক্ কেইবা এ সংসারে কেবল চালকের চালমত চায়? গাড়ীতে বসিয়া, পরোক্ষ আর সমক্ষের ভেদবিচারে মনটা ব্যস্ত রহিল। ভাবিলাম প্রত্যঙ্গের মহিমা আর কতক্ষণ! দেখিতে দেখিতে ত সকলই স্মৃতির ভাণ্ডারে স্তূপীকৃত হয়। স্মৃতিও আবার কয়দিন পরে কিছু চাপা দেয়, কিছু ছাঁটিয়া ফেলে, এবং যাহা সার মনে করে, তাহা ভাণ্ডারে সঞ্চিত রাখে। কিন্তু এই সার বোঝা লইয়াই যাহা কিছু বোঝাপড়া, যতসব বিবাদ-ঝগড়া। এই সকল কথা ভাবিতে ভাবিতে চাহিয়া দেখি, চারিদিকে কেমন একটা লুট পাট লাগিয়া গিয়াছে। অশ্বগুলি কেবলই সর সর, ছাড় ছাড় ডাকহাঁক করিতে করিতে চলিয়াছে। তা পথ সরে ত পাহাড় ছাড়ে না, পাহাড় ছাড়ে ত, শৈলরাজি শোনে না, ভারি মুস্কিল। সত্যি এদের অতিথিসৎকারকে বলিহারি যাই। আমরা তখন ইহাদের শিষ্টাচারে মহা তুষ্ট হইয়া, আমরা যে নিতান্তই কুক্ কোম্পানীর হাতে বাঁধা আছি, সে কথা জানাইলাম; বৃথা পথশ্রম স্বীকার না করিতে করযোড়ে অনুরোধ করিলাম। তখন সজ্জনের মত ইহারা অগত্যা বিদায় লইতে বাধ্য হইলেন দেখিয়া, ভানুরাজ ভারি খুসী। এমন তেজস্বী জনের কি আর, নিস্তেজ নিরীহের মত থাকিতে ভাল লাগে? বাকি রাস্তা তিনি বেশ একজন মুরুবিবর মতই আমাদের সঙ্গে সঙ্গে চলিলেন। আমরাও পুরাতন বন্ধুকে পুনরায় পূর্ব্ব হালে পাইয়া পরম প্রীত হইলাম।

 বাসস্থানে আসিয়া নিতা নৈমিত্তিক সবই চলিল, সবই মিলিল, কেবল কারও কারও মনের সন্ধান পাওয়া গেল না। বুঝি বা সেটা সেই স্বপ্ন-রাজ্যে পড়িয়াই হিমসীম