ব্যস্ত হইয়া উঠিলে কেন? এমন ত কখনও দেখি নাই। কেন, আজ কি পড়িবার বই সব ফুরাইয়া গিয়াছে?”
চপলার চক্ষুতে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তীক্ষ্ণতর হইয়া উঠিল। সে নলিনবিহারীর দিকে তীব্র কটাক্ষপাত করিল। নলিনবিহারীর চক্ষু তখন অশ্রুপ্লাবিত হইয়া উঠিতেছিল; সে সে কটাক্ষ লক্ষ্য করিতে পারিল না। নহিলে সে কটাক্ষ তীক্ষ্ণধার ছুরিকার মত তাহার ব্যথিত কাতর হৃদয় বিদ্ধ করিত।
চপলা কক্ষ হইতে বাহির হইয়া যাইতেছিল। নলিনবিহারীর বক্ষ হইতে বেদনার উচ্ছ্বাস উচ্ছ্বসিত হইয়া যেন তাহার কণ্ঠরোধ করিতেছিল। সে বহুকষ্টে ভগ্নকণ্ঠে বলিল, “চপলা, আমি কবে তোমার সুখে অবহেলা করিয়াছি। তোমার সুখের জন্য—”
চপলা ফিরিল না; উপেক্ষাভরে চলিয়া গেল।
নলিনবিহারীর নয়নে অশ্রু উথলিয়া উঠিল। তাহার মাথা ঘুরিতে লাগিল,—যেন সংজ্ঞালোপ হইয়া আসিতে লাগিল।
কিছুক্ষণ পরে যেন নলিনবিহারীর সংজ্ঞা ফিরিয়া আসিল; সে প্রকৃতিস্থ হইল! তখন সব ঘটনা যেন স্বপ্নবৎ প্রতীয়মান হইতে লাগিল। নলিনবিহারী কাঁদিল। কাঁদিয়া যখন হৃদয়ের বিষম যন্ত্রণাচাঞ্চল্য কিছু শান্ত হইল, তখন সে ভাবিতে লাগিল,—হায়! যে দরিদ্র উদরান্নসংস্থানের জন্য সমস্ত দিন শ্রম করে, কিন্তু জানে, সে সন্ধ্যায় শ্রান্তদেহে গৃহে ফিরিবে বলিয়া দুইটি নয়ন তাহার পথ চাহিয়া আছে; জানে, তাহার সুখে আর এক জন সুখী,আর এক জন তাহার দুঃখের অংশ লয়—সেও তাহার অপেক্ষা
১৯৩