পাতা:নাগপাশ - হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ.pdf/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ ।

গৃহে ৷

“কি হ’বে—আমার মন যদি যায় ভুলে?
আমার বালির শয্যায় কালীর নাম দিও কর্ণমূলে।”

 দত্তগৃহের চণ্ডীমণ্ডপে পূর্ব্বপাড়ার বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় এই গান গাহিতেছিলেন। বাঙ্গালীর সামাজিক জীবনে ‘ক্লবে’র আবশ্যক না হইবার কারণ, গ্রামের এক এক পাড়ায় এক এক গৃহে মিলনক্ষেত্র ছিল—এখনও স্থানে স্থানে আছে। সেখানে ধূমপান, সমাজচর্চ্চা, পরচর্চ্চা, দাবা ও পাশাখেলা এবং সঙ্গীতাদি হইত। গৃহস্বামীর অবারিত আহ্বানে কেহই কোনরূপ সঙ্কোচ বোধ করিতেন না। যে স্থানে জনে জনে ঘনিষ্ঠতাই সামাজিক জীবনের বিশেষত্ব, সে স্থানে এ সঙ্কোচ থাকে না। ভারতবর্ষে এই ঘনিষ্ঠতা ঘনিষ্ঠতম করিবার জন্য গ্রাম্যসমিতির সৃষ্টি।

 চণ্ডীমণ্ডপে বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় এই গান গাহিতেছিলেন; আর পার্শ্বের কক্ষে প্রভাত ও নবীনচন্দ্র পরামর্শ করিতেছিলেন। প্রভাত ধরিয়াছে, পরদিবস গ্রামের সীমান্তে বিলে মৎস্য ধরিতে যাইবে। নবীনচন্দ্রের সম্মত হওয়া ব্যতীত গত্যন্তর নাই।

 পর দিন প্রভাত প্রত্যুষেই শয্যাত্যাগ করিল। নিশাবসানে যখন জীবজগৎ প্রথম জাগরিত হয়, প্রথম আলোকবিকাশসূচনাকালের সেই বর্ণনাতীত সৌন্দর্য্য উপভোগের সুযোগ পল্লীগ্রামে যেমন হয়, জনারণ্য ও সৌধারণ্য নগরে তেমন হয়

২২