এক সময় এই ট্রেণে যাইবার জন্য তাহার কত আগ্রহ ছিল, এই সময়ের জন্য এক এক দিন কত ব্যস্ত হইত! এখনও ত সে যাইতে পারে। বন্দী পলায়নচেষ্টায় আপনার কারাগৃহের প্রাচীর, হর্ম্ম্যতল—সব শতবার পরীক্ষা করিয়া শেষে যদি দেখে, বাতায়নের লৌহদণ্ড তাহার সামান্য আকর্ষণে খুলিয়া আসিল, তবে সে যেমন আনন্দে বিহ্বল হয়, প্রভাত তেমনই বিহ্বল হইল। প্রভাত পকেটে হাত দিল,—ব্যাগ লইয়া দেখিল,— টাকা আছে। সে উঠিয়া রাস্তায় আসিল,—গাড়ী লইল। অল্পক্ষণের মধ্যেই সে ষ্টেশনে উপস্থিত হইল।
ট্রেণ ছাড়িবার অধিক বিলম্ব ছিল না। টিকিট লইয়া প্রভাত দ্রুত আসিয়া ট্রেণে উঠিল। একটি নিদ্রিতা বালিকাকে বক্ষে লইয়া এক জন ভিক্ষুক প্ল্যাটফরমে ভিক্ষা করিতেছিল,—“এই মেয়েটির মা নাই। আমি এই ষ্টেশনে মালগুদামে কায করিতাম। এখন আর কায করিতে পারি না। বড় ‘সাহেব’ দয়া করিয়া আমাকে ভিক্ষা করিতে অনুমতি দিয়াছেন।—ইত্যাদি।” প্রভাত ব্যাগ খুলিল; যাহা কিছু ছিল, তাহাকে দিল। অত অর্থ পাইয়া ভিক্ষুক বিস্মিত হইয়া চাহিল, অপর যাত্রীরাও বিস্ময় প্রকাশ করিল। ট্রেণ ছাড়িয়া দিল।
২৭২