পাতা:নাগপাশ - হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ.pdf/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নাগপাশ

ডুব দিতেছে। জলে জলজ গুল্ম জন্মিয়াছে; সেই গুল্মমধ্যে ও পঙ্কে বহু জীব জন্মিতেছে—মরিতেছে; বহু জীব সেই জলে জীবন ধারণ করিতেছে, আবার সেই জলে মৃত্যুর অমোঘ অস্ত্র বিষবাষ্প উত্থিত হইতেছে। সে জলরাশি একাধারে রমণীয় ও ভয়ঙ্কর। তীরে বৃক্ষশাখায় বহু হরিৎ পারাবত কূজন-রত; বর্ণবৈচিত্র্যরমণীয় অসংখ্য পক্ষী শাখা হইতে শাখান্তরে—বৃক্ষ হইতে বৃক্ষান্তরে উড়িয়া বসিতেছে। দীর্ঘকালের পর এই রমণীয় অবিকৃত স্বাভাবিক দৃশ্য দেখিয়া প্রভাতচন্দ্রের নগরদৃশ্যক্লান্ত নয়ন যে স্নিগ্ধ শান্তি লাভ করিল, তাহা বুঝাইব কেমন করিয়া?

 অদূরে একটি বৃক্ষমূলে বিহগের চঞ্চুচ্যুত ফলের কঠিন অস্থি লক্ষ্য করিয়া বৃক্ষশাখা হইতে একটি কাঠবিড়াল নিঃশব্দ-দ্রুতগতিতে আসিয়া সেটিকে ধরিল; অত্যন্ত নিপুণ হস্তে সেটিকে ঘুরাইয়া ফিরাইয়া পুনঃপুনঃ দর্শন করিতে লাগিল; উদ্দেশ্য,— ভাঙ্গিয়া মধ্যস্থিত কোমল অংশ আহার করিবে। অল্পক্ষণ পরেই আর একটি কাঠবিড়াল সন্ধান পাইয়া ঊর্দ্ধপুচ্ছে আসিল। তখন উভয়ে কলহ আরব্ধ হইল—বিষম সংগ্রামে কেহ ঊর্দ্ধে— কেহ নিম্নে গড়াগড়ি দিতে লাগিল—ফলাস্থি কখনও একের, কখনও অপরের করায়ত্ত হইতে লাগিল। শেষে একটি পরাজিত হইয়া বিষণ্নমনে প্রস্থান করিল। অপরটি বহু চেষ্টায় সেটি ভাঙ্গিয়া দেখিল, মধ্যে আহারোপযোগী কোমল অংশ নাই। সে তাহা ত্যাগ করিয়া একবার চারি দিকে চাহিল, তাহার পর

২৪