উপক্রমণিকা।
কিসের উৎসব?
ধূলগ্রামের দত্তগৃহে আজ যেন মহোৎসব। শরতের প্রভাতরবিকরে উৎফুল্ল গৃহ যেন আসন্ন উৎসব সূচিত করিতেছে। এখনও অধিক খেলা হয় নাই; এখনও রবিকরে গৃহপ্রাঙ্গণে অপরিণত তমালের শাখায় বিস্তৃত ঊর্ণনাভের জালে রজনীর সঞ্চিত শিশির শুকায় নাই; গৃহপ্রাচীরকোটরে শালিক-শাবক এইমাত্র জাগিয়া আহারের জন্য ব্যাকুলতা জানাইতেছে; একটি বুলবুল আহারের সন্ধানে বাহির হইয়া তমালশাখায় বসিয়া প্রাঙ্গণে দূর্ব্বাদলে হরিৎতনু পতঙ্গের সন্ধান করিতেছে; রাখালবালকগণ গোপাল লইয়া মাঠে গিয়াছে, গোক্ষুরোত্থিত ধূলিরাশি এখনও রাজপথের উপর বাতাসে ভাসিয়া বেড়াইতেছে; বালকগণ আসনে তালপত্র জড়াইয়া ও প্রকোষ্ঠে মস্যাধার ঝুলাইয়া গ্রাম্য পাঠশালায় যাইতেছে; গ্রামের নবীনধনী চৌধুরীদিগের গৃহে পূজার প্রভাতীনহবৎধ্বনি কেবল শাস্ত হইয়াছে।
গৃহের সম্মুখে রোয়াকে দাঁড়াইয়া নবীনচন্দ্র: চণ্ডীমণ্ডপের পূর্ব্বদিকস্থ প্রকোষ্ঠের বাতায়নগুলি মুক্ত করিবার জন্য ভৃত্যকে আদেশ করিতেছেন। কক্ষমধ্যে তক্তপোষের উপর অমল শ্বেত আসন; এক পার্শ্বে একখানি সঙ্কীর্ণ উচ্চ চৌকী। নবীনচন্দ্র ধূমপান করিতে করিতে ভৃত্যকে আদেশ দান করিতেছেন, এমন সময় চণ্ডীমণ্ডপের পশ্চিমপার্শ্বস্থিত কক্ষের দ্বার হইতে কন্যা কমল ডাকিল,—“বাবা!” কন্যার বয়স সপ্তদশ; পিতার চত্বারিংশৎ।