পাতা:নাগপাশ - হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ.pdf/৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নাগপাশ।

 কৃষকদিগকে বুঝাইয়া বিদায় দিয়া, সতীশচন্দ্র যখন অন্তঃপুরে প্রবেশ করিল, তখন একটু রাত্রি হইয়াছে। ছেলে ঘুমাইয়া আছে; কমল হর্ম্ম্যতলে পাটীর উপর বসিয়া দীপালোকে ‘রামায়ণ’ পাঠ করিতেছে। লক্ষ্মণ সীতাকে তপোবনে আনিয়া রামের আদেশ শুনাইতেছেন। পাঠ করিতে করিতে রাম, সীতা, দেশ, কাল, সর বিস্তৃত হইয়া রমণীহৃদয় রমণীর দুর্দ্দশাদুঃখে ব্যথিত হইতেছিল। সতীশচন্দ্র কক্ষে প্রবেশ করিল। কমল মুখ তুলিয়া তাহার দিকে চাহিল, নয়নে অশ্রু টলটল করিতেছে। সেই দীপালোকে সমুজ্জ্বল —পূত অশ্রুর দীপ্তির তুলনায় হীরকের দীপ্ত দীপ্তি তুচ্ছ। সতীশ জিজ্ঞাসা করিল, “পড়িতে পড়িতে কাঁদিতেছ?”

 কমল সামলাইয়া লইতে চেষ্টা করিল; বলিল, “কই?” কিন্তু গলাটা বড় ধরাধরা কথা অশ্রুবাষ্পজড়িত, আর সেই কথা বলিতে বলিতে দুই বিন্দু অশ্রু আঁখিতট ছাপাইয়া গড়াইয়া পড়িল।

 সতীশ পত্নীর পার্শ্বে উপবেশন করিল।

 সতীশ জিজ্ঞাসা করিল, “কোথায় পড়িতেছিলে?”

 কমল স্থান নির্দ্দেশ করিয়া দিল। সতীশ পড়িতে লাগিল। শুনিয়া কমলের অশ্রু দ্বিগুণ বহিতে লাগিল। শেষে স্বামীর মধুর কণ্ঠে সেই করুণাসিক্ত পুণ্য কাহিনী শুনিতে শুনিতে সে ফোঁপাইয়া ফোঁপাইয়া কাঁদিতে লাগিল। সতীশ পুস্তক রাখিয়া পত্নীকে বক্ষে টানিয়া লইল। স্বামীর বক্ষে মুখ লুকাইয়া কমল কাঁদিয়া মনের ভার লাঘব করিল।

 সে স্থির হইলে সতীশ বলিল, “তোমার দাদার বিবাহ স্থির হইল।”