পাতা:নানাচর্চা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারতবর্ষ সভ্য কিনা २११ নির্ভর করবে না। আমাদের প্রাচীন সভ্যতা কিম্বা অসভ্যতার উপর, যতটা নির্ভর করবে। ইউরোপের বর্তমান সভ্যতা কিম্বা অসভ্যতার উপর। যদি কেউ বলেন যে, ইউরোপের খাতিরে নয়, সত্যের খাতিরে আমরা প্ৰমাণ করতে চাই যে, ভারতবর্ষ সভ্য। তার উত্তরে আমার বক্তব্য এই যে, ও চেষ্টায় উণ্টো উৎপত্তি হবারই সম্ভাবনা বেশি। মানুষ যেমন মুখের জোরে নিজেকে অপরের চাইতে বেশি ভদ্র প্রমাণ করতে গিয়ে শুধু অভদ্রতারই পরিচয় দেয়, জাতিও তেমনি নিজেকে অপরের চাইতে বেশি সভ্য প্রমাণ করতে গিয়ে শুধু অসভ্যতারই পরিচয় দেয়। এর প্রথম কারণ, সভ্যতা প্ৰমাণ করতে হয়। হাতে কলমে, কাগজে কলমে নয়,-কেননা ও-বস্তু আত্মপ্রতিষ্ঠিত হয় যুক্তির বলে নয়, কৰ্ম্মের ফলে । এর দ্বিতীয় কারণ, মানুষ সভ্য হলেও মানুষই থাকে ; সভ্য মানবেরও সত্তার মূলে রয়েছে আদিম মানব । সুতরাং মানুষ যখন অবিশ্বাসী লোকের সুমুখে নিজেকে সভ্য-মানব বলে খাড়া করতে যায়, তখন প্রায়ই দেখা যায় যে, ও-ক্ষেত্রে যাকে খাড়া করা হয়, সে হচ্ছে আদিম মানব ; কেননা এরকম কাজ মানুষে এক রাগের মাথায় ছাড়া আর কোন অবস্থায় করে না । ( প্ৰজ্ঞা প্রতিষ্ঠিতা থাকলে মানুষে যে এ কাজ করে না, তার কারণ ও-কাজ করা হয় অনাবশ্যক, নয় নিরর্থক। সভ্যতা বলে’ যদি মানব-সমাজে কোনও এক বস্তু থাকে, তাহ’লে সভ্যসমাজ মাত্রেই তার সঙ্গে পরিচিত। যা প্ৰত্যক্ষ, তার অস্তিত্বের প্রমাণ অনাবশ্যক । আর অসভ্যোর কাছে তার অস্তিত্ব প্ৰমাণ করতে যাওয়া বিড়ম্বন, কেননা কোনও প্ৰমাণ প্রয়োগের দ্বারা অসভ্যোর কাছে সভ্যতাকে প্ৰত্যক্ষ করে” তোলা যাবে না । Sዓ