বলিয়াছি আমি ইংলণ্ডেশ্বরীর নৌ-বহরের একজন কর্ম্মচারী। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রধান সেনাপতি এড মিরাল রেড ফর্ণের আদেশানুসারে আমি এখানে আসিয়াছি। আমি নৌ-বিভাগে চাকরী করিলেও আমার আর্থিক অবস্থা বেশ সচ্ছল। মিস্ এরস্কাইন কোনও লক্ষপতির একমাত্র কন্যা, পিতার বিপুল সম্পত্তির উত্তরাধিকারিণী।—এই সম্পত্তি আত্মসাৎ করিবার দুরভিসন্ধিতেই ডাক্তার ল্যাম্পিয়ন তাহার তাগিনেয়ীকে কৌশলে হত্যা করিবার ষড়যন্ত্র করিয়াছে, এবং কাপ্তেনটা কিছু টাকার লোভে তাহার সহায়তা করিতে সম্মত হইয়াছে। আমি জানিতে পারিয়াছি, মিস্ এরস্কাইনের মৃত্যুর পর, কাপ্তেন ডাক্তার ল্যাম্পিয়নের নিকট পঞ্চাশহাজার টাকা পাইবে।—অতঃপর আমি কি কবিব, তাহাই এখন শোন।—আগামী কল্য রাত্রেই আমি মিস্ এরস্কাইনকে সঙ্গে লইয়া অন্যের অলক্ষ্যে এই জাহাজ হইতে পলায়ন করিব, নতুবা তাঁর প্রাণরক্ষার কোনও আশা নাই। আমরা যাহাতে নির্বিঘ্নে জাহাজ ত্যাগ করিতে পারি, এ বিষয়ে যদি তুমি আমাকে সাহায্য কর, তাহা হইলে আমি লণ্ডনে আমার ব্যাঙ্কারের নামে তোমার হাতে একখানি পত্র দিব, তুমি সেই পত্র ব্যাঙ্কে দিলেই হাজার পাউণ্ড পাইবে। ইহাই তোমার পুরস্কার। এতদ্ভিন্ন মিস্ এরস্কাইনও কৃতজ্ঞতার নিদর্শন স্বরূপ তোমাকে আর একহাজার পাউণ্ড পুরস্কার দিবেন, এবিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নাই। এখন বল, তুমি আমাদের সাহায্য করিতে সম্মত আছ কি না।
পাচক মুহূর্ত্তকাল নিস্তব্ধ থাকিয়া বলিল, “আপনি যে পুরস্কারের কথা বলিলেন, তাহা আমার পরিশ্রমের তুলনায় প্রচুর,—এমন কি, আশাতীত, ইহা আমাকে স্বীকার করিতেই হইবে। কিন্তু আমি যে উহা অপেক্ষা অধিক পুরস্কার লোভে আপনার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করিব না—পুরস্কারের চিঠিখানি হস্তগত করিয়া অবশেষে আপনার কথা ল্যাম্পিয়নের নিকট প্রকাশ করিব না, ইহা আপনি কিরূপে বুঝিবেন? আমি ত ধর্ম্মজ্ঞানহীন সামান্য পাচক, আমার অপেক্ষা সহস্র গুণ অধিক সম্ভ্রান্ত লোকেও এ রকম বিশ্বাসঘাতকতা সর্ব্বদাই করিয়া থাকে।”