ইউরোপের আইন-কানুনের মধ্যে প্রাচীন রোমের প্রভাব ষথেষ্ট লক্ষিত হইলেও, নারী-সম্বন্ধে ইহুদিদের কড়া ব্যবস্থাই অধিক স্থান পাইয়াছে। কেন না, এইগুলাই পুরুষের ভাল লাগিয়াছে এবং মনের সঙ্গে মিলিয়াছে। প্রথমে মনে হয় বটে, ধর্মের নৈকট্য হেতু ইহাই ত স্বাভাবিক। কিন্তু একটু তলাইয়া দেখিলেই দেখিতে পাওয়া যায়, স্বাভাবিক বটে; কিন্তু শুধু তাহা ধর্মের ঘনিষ্ঠতা হেতুই স্বাভাবিক নয়, তাহা পুরুষের মনোনীত হইয়াছে বলিয়াই স্বাভাবিক হইয়াছে। অবশ্য ধর্মের চাপ ত আছেই। যীশু খৃষ্ট অনেক কথাই বলিয়া গিয়াছেন, কিন্তু স্ত্রীজাতির উপর অত্যাচার-সম্বন্ধে স্পষ্ট করিয়া একটি কথাও বলিয়া যান নাই। জগৎবিখ্যাত সেণ্ট পল শিখাইয়াছেন, ধর্ম-সম্বন্ধে নারী পুরুষের মত কোন প্রশ্ন করিতে পারিবে না। সে সর্বদাই তাহার স্বামীর অধীন,—যে-হেতু ঈশ্বর নারীকে পুরুষের জন্যই সৃজন করিয়াছেন, পুরুষকে নারীর জন্য সৃজন করেন নাই। আরও বলিয়াছেন, নারী কোন পুরুষকে শিক্ষা দিতে পারবে না। সে-ই সংসারে পাপ প্রবেশ করাইয়াছে। তাহারা অনন্ত নরকে ডুবিবে—সদগতির কোন উপায় নাই। তবে সদগতি হইতে পারে, গর্ভে সন্তান ধারণ করিতে পারিলে। ঈশ্বর-জনিত পল ঠাকুরের উক্তি কি সুন্দর! নারীর মুক্তির কি সোজা পথ, এবং এই পথের পরিচয় বিলাতের যে কোন ধর্মগ্রন্থ খুলিলেই চোখে পড়ে। আমাদের শাস্ত্রে সন্তানের জন্যই নারী মহাভাগা, এবং পুত্রের জন্যই ভার্যা গ্রহণের ব্যবস্থা আছে, এবং সংসারের যে কোন দেশের ইতিহাস, ধর্মগ্রন্থ আলোচনা করিয়া দেখিলে কম-বেশী এইরকমের ব্যবস্থাই দেখিতে পাওয়া যায়।
নারীর সম্মান তাহার নিজের জন্য নহে, তাহার সম্মান নির্ভর করে পুত্র-প্রসবের উপর। পুরুষের কাছে এই যদি তাহার নারী-জীবনের একটিমাত্র উদ্দেশ্য হইয়া থাকে, ইহা কোনমতেই তাহার গৌরবের বিষয় হইতে পারে না। কিন্তু সত্যই তাই। এ-ছাড়া তাহার কাছে সংসার আর কিছু আশা করে না, এবং সে যত কিছু সম্মান দিয়া আসিয়াছে,