নিজের চেষ্টাতেই লাভ করিয়াছে। প্রাচীন মিশরে এই চেষ্টা একবার হইয়া গিয়াছিল এবং সেই চেষ্টার স্রোত রোম পর্যন্ত আসিয়া আঘাত করিয়াছিল। আমাদের এ-দেশেও একদিন এ চেষ্টা হইয়াছিল, যখন নারী বেদ রচনা করিবারও স্পর্ধা রাখিত। এখন তাহা স্পর্শ করিবার অধিকার পর্যন্ত তাহার নাই। যখন নারী পুরুষের মুখের দেবী সম্বোধন শুনিয়া গলিয়া পড়িত না, সে মুখের কথা কাজে পরিণত করিতে বাধ্য করিত, তখন ছিল নারীর মূল্য।
আর এখনকার দিনের একটা দৃষ্টান্ত দিই। একসময় এ-দেশে যখন বিধবা-বিবাহের স্বপক্ষে-বিপক্ষে ঘোরতর আন্দোলন উঠিয়াছিল, সেসময় যাঁহারা বিধবা-বিবাহের স্বপক্ষে, তাঁহারা নানাবিধ সুযুক্তি কুযুক্তির মধ্যে এই একটা অভিনব যুক্তির অবতারণা করিয়াছিলেন যে, অল্পবয়স্কা বিধবাদের পুনর্বিবাহ না হওয়াতেই বঙ্গদেশে কুলত্যাগিনীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাইতেছে। সুতরাং, বিধবা-বিবাহের অনুকূলে ইহাও একটা হেতু হওয়া উচিত। মোটের উপর, বিধবাবিবাহ উচিত, কিংবা উচিত নয়, এ লইয়া উভয় পক্ষে তুমুল লড়াই চলিতে লাগিল, কিন্তু পুনর্বিবাহ না হওয়ার দরুণই যে বিধবারা কুলত্যাগ করে, এই কথাটা বিধবা-বিবাহের শত্রুপক্ষীয়েরাও অস্বীকার করিল না। অর্থাৎ পুরুষমাত্রেই মানিয়া লইল যে, হাঁ, কথা বটে! কুলত্যাগিনীর সংখ্যা যখন বাড়িয়াই চলিতেছে, তখন বিধবা ভিন্ন কে আর কুলত্যাগ করিতে সম্মত হইবে! সুতরাং কিরূপ বিধি-নিষেধ প্রয়োগ করিলে, কিরূপ শিক্ষা, দীক্ষা, ধর্ম-চর্চার মধ্যে সদ্য-বিধবাকে নিমজ্জিত করিয়া রাখিতে পারিলে, কিরূপে তাহার নাক চুল কাটিয়া লইয়া বিশ্রী করিয়া দিতে পারিলে, এবং কিরূপ খাটুনির মধ্যে ফেলিয়া তাহার অস্থি-চর্ম পিষিয়া লইতে পারিলে, এই অমঙ্গলের হাত হইতে নিস্তার পাওয়া যাইতে পারে। স্বপক্ষ বিপক্ষ উভয়েই তাহা লইয়া মাথা ঘামাইতে লাগিলেন। আজও এ মীমাংসার শেষ হয় নাই। এখনও থাকিয়া থাকিয়া মাসিক পত্রে প্রবন্ধ উচ্ছ্বসিত হইয়া উঠে, কি