বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:নিগ্রোজাতির কর্ম্মবীর - বিনয়কুমার সরকার (১৯১৪).pdf/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার বাল্য-জীবন
৩৫

একটা ঠিক করিয়া লইলাম। যেই শিক্ষক আমার গোটানাম শুনিতে চাহিলেন, আমি গম্ভীর স্বরে বলিয়া দিলাম ‘বুকার ওয়াশিংটন’ যেন চিরদিন আমাকে লোকে এই নামেই জানে। পরে শুনিয়াছি, আমার মাতা আমাকে ‘বুকার ট্যালিয়াফারো’ নাম দিয়াছিলেন। কিন্তু ‘ট্যালিয়াফারো’ শব্দ কোন কারণে আমার মনে ছিল না। যখন ইহা জানিলাম তখন হইতে আমি তিন তিনটা শব্দের নাম ব্যবহার করিয়া আসিতেছি। সুতরাং আজ আমি বুকার ট্যালিয়াফারো ওয়াশিংটন।

 অনেক সময়ে আমি নিজকে কোন বড় লোকের সন্তানরূপে কল্পনা করিতে চেষ্টা করিয়াছি। যেন আমার পূর্ব্বপুরুষেরা ধনীসচ্চরিত্র, সুপণ্ডিত ইত্যাদি ছিলেন। যেন উত্তরাধিকারের সূত্রে আমি বংশ গৌরব, সামাজিক কীর্ত্তি, জমিদারী ইত্যাদির অধিকারী হইয়া জন্মিয়াছি। যেন আমি একটি বনিয়াদি ঘরের সন্তান। কিন্তু এইরূপ কল্পনায় আমি বিশেষ সুখী হইতাম না। আমি বুঝি, পূর্ব্বপুরুষের গৌরবের দোহাই দিয়া যদি আমি বড় হইতে যাই তাহা হইলে আমার নিজের কৃতিত্ব কি হইল? পরের ঘাড়ে চড়িলে সকলকেই বড় দেখায়। নিজ ব্যক্তিগত চরিত্রের প্রভাব তাহাতে কিছু বুঝা যায় কি? তাহা ছাড়া উন্নতির পথে একটা বড় অসুবিধা বোধ হয় আসিয়া জুটে। সকল বিষয়ে পরের উপর নির্ভর করিবার প্রবৃত্তি জন্মে, পরের ধনে পোদ্দারি করিতে ইচ্ছা হয়। নিজে খাটিয়া নিজের কাজ নিজে সম্পন্ন করিতে সুযোগ বেশী পাওয়া যায় না। নিজের দায়িত্বজ্ঞান এবং কর্ত্তব্যবোধও কমিতে থাকে।