বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:নিগ্রোজাতির কর্ম্মবীর - বিনয়কুমার সরকার (১৯১৪).pdf/৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিদ্যার্জ্জনে কঠিন প্রয়াস
৬৫

 এইবার শয্যার কথা কিছু বলিব। এতদিন ত মাটিতে শুইয়া অথবা ন্যাক্‌ড়ার বস্তায় পড়িয়া রাত্রি কাটাইতে অভ্যাস করিয়াছি। হ্যাম্পটন-বিদ্যালয়ে আসিয়া দেখি—প্রত্যেকের বিছানার উপরে দুই দুইটা করিয়া চাদর বিস্তৃত রহিয়াছে। দুইটা চাদরের সমস্যা আমি কোন মতেই মীমাংসা করিতে পারিলাম না। প্রথম রাত্রিতে আমি দুইটা চাদরের নীচেই শুইলাম। দ্বিতীয় রাত্রে ভুল বুঝিতে পারিয়া—দুইটা চাদরের উপরেই শুইয়া পড়িলাম। আমার ঘরে আরও ছয় জন ছাত্র শুইত। তাহারা আমার দুরবস্থা দেখিয়া বোধ হয় মজা দেখিত এবং মনে মনে হাসিত। কেহই কিছু বলিত না। পরে তাহাদিগকে দেখিতে দেখিতে দুইটা চাদরের সার্থকতা বুঝিলাম। একটা গায়ে দিতে হয়—আর একটা পাতিয়া শুইতে হয়।

 হ্যাম্পটনে বোধ হয় আমার অপেক্ষা ছোট ছেলে আর কেহ ছিল না। অনেক প্রবীণ পুরুষ ও স্ত্রী এখানে লেখাপড়া শিখিত। এই সময়ে এই বিদ্যালয়ে প্রায় চারি শত ছাত্র ও ছাত্রী ছিল। সকলকেই বিদ্যার্জ্জনে মহা উৎসুক দেখিতাম। অনেকেরই শিখিবার বয়স পার হইয়া গিয়াছে—অন্ততঃ বই মুখস্থ করিবার সময় আর তাহাদের ছিল না। তথাপি তাহারা চেষ্টা করিত। তাহাদের অকৃতকার্য্যতায় তাহারা ভ্রূক্ষেপ করিত না। তাহাদের আন্তরিকতার দৃষ্টান্ত বিরল। একে বেশী রয়স—তাহার উপর দারিদ্র্য, তাহার উপর অকৃতকার্য্যতা—তথাপি তাহারা বিচলিত হইত না। এরূপ কর্ম্মযোগ বেশী দেখা যায় কি?