শৈলজা মুখ তুলিল। সস্নেহে মৃদু হাসিয়া বলিল, অতুল এসেছিস? দাঁড়া বাবা-ও কি রে। জুতো পায়ে? নীচে যা―নীচে যা―
বাড়ির আর কোন ছেলে অনুরূপ অবস্থায় শৈলজার হাতে এত সহজে নিষ্কৃতি পাইলে ছুটিয়া পলাইয়া বাঁচিত, কিন্তু অতুল ঘাড় গুঁজিয়া দাঁড়াইয়া রহিল।
শৈলজা, উঠিয়া দাঁড়াইয়া বলিল, জুতো পায়ে দিয়ে এখানে আসতে নেই অতুল, নীচে যাও।
অতুল মুখে ক্ষীণস্বরে কহিল, আমি ত চৌকাঠের বাইরে দাঁড়িয়ে আছি—এখানে দোষ কি?
শৈলজা ধমকাইয়া উঠিল, দোষ আছে—যাও।
অতুল তথাপি নড়িলনা; সে মানসচক্ষে দেখিতে লাগিল, হরিচরণ কানাই, বিপিন প্রভৃতি আড়াল হইতে তাহার লাঞ্ছনা উপভােগ করিতেছে। তাই বজ্জাত ঘােড়র মত ঘাড় বাঁকাইয়া বলিল, আমরা চূঁচড়ার বাড়িতে ত জুতা পায়ে দিয়েই রান্নাঘরে যেতুম—এখানে চৌকাঠের বাইরে দাঁড়ালে কিছু দোষ নেই।
ইহার স্পর্ধা দেখিয়া শৈলজা দুঃসহ বিস্ময়ে স্তব্ধ হইয়া দাঁড়াইয়া রহিল। শুধু তাহার দুই চোখ দিয়া যেন আগুন ফুটিয়া বাহির হইতে লাগিল।
ঠিক এই সময়ে হরিচরণের বড়ভাই মণীন্দ্র ডাম্বেল ও মুগুর ভিজিয়া ঘর্মাক্তকলেবরে বাইরে যাইতেছিল। শৈলজার চোখের দিকে চাহিয়া সবিস্ময়ে জিজ্ঞাসা করিল, কি হয়েছে খুড়ীমা?
ক্রোধে শৈলজার মুখ দিয়া স্পষ্ট কথা বাহির হইল না। নীলা দাঁড়াইয়াছিল, অতুলের পায়ের দিকে আঙুল দিয়া দেখাইয়া বলিল, সেজদা জুতাে পায়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে―কিছুতে নাবছে না।
মণীন্দ্র হাকিয়া কহিল, এই―নেবে আয়।
অতুল গোঁ-ভরে বলিল, এখানে দাঁড়াতে দোষ কি? ছােটখুড়ী মামাকে দেখতে পারে না বলে শুধু যা যা কচ্চে।