এবং এমনি কঠোর উপবাস করিতে পারিত যে, একবার শুরু করিলে কোন উপায়েই তাহাকে জলস্পর্শ করানো যাইত না―এইটাই সিদ্ধেশ্বরীরর সর্বাপেক্ষা উৎকণ্ঠার হেতু ছিল।
শৈলর মাসীর বাড়ি পটলডাঙ্গায়। এবার কৃষ্ণনগর হইতে আসিয়া অবধি তাঁহাদের সহিত দেখা করিতে পারে নাই। আজ একাদশী, শাশুড়ীর রান্নার কাজ করে নাই―তাই সকালেই সিদ্ধেশ্বরী মেজছেলে হরিচরণের উপর মাকে ওষধ খাওয়াইবার ভার দিয়া সে পটলডাঙ্গায় গিয়াছিল।
শীতকাল। ঘণ্টা-দুই হইল সন্ধ্যা হইয়াছে। কাল প্রভাত হইতেই সিদ্ধেশ্বরীর ভালো করিয়া জ্বর ছাড়ে নাই। আজ এই সময়টায় তিনি লেপ মুড়ি দিয়া চুপ করিয়া নির্জীবের মত তাঁহার অতি প্রশস্ত শয্যার একাংশে শুইয়া ছিলেন এবং এই শয্যার উপরেই তিন চারিটি ছেলেমেয়ে চেঁচামেচি করিয়া খেলা করিতেছিল। নীচে কানাইলাল প্রদীপের আলোকের সম্মুখে বসিয়া ভূগোল মুখস্থ করিতেছিল—অর্থাৎ বই খুলিয়া হাঁ করিয়া হুড়োহুড়ি দেখিতেছিল। ওধারে শয্যার উপর হরিচরণ শিয়রে আলো জ্বালিয়া চিত হইয়া নিবিষ্টচিত্তে বই পড়িতেছিল। বোধ করি পাসের পড়া করিতেছিল, কারণ এত গণ্ডগোলও তাহার লেশমাত্র ধৈর্যচ্যুতি ঘটিতেছিল না। যে শিশুর দলটি এতক্ষণ চেঁচামেচি করিয়া বিছানার উপর খেলিতেছিল ইহারা সকলেই মেজকর্তা হরিশের সন্তান।
বিপিন সহসা সরিয়া আসিয়া সিদ্ধেশ্বরীর মুখের উপর ঝুঁকিয়া পড়িয়া বলিল, আজ আমার ডানদিকে শোবার পালা, না বড়মা?
কিন্তু বড়মা জবাব দিবার পূর্বেই নীচে হইতে কানাই ডাঁক দিয়া বলিল, না বিপিন, তুমি না। বড়মার ডানদিকে আমি শোব যে।
বিপিন প্রতিবাদ করিল, তুমি কাল শুয়েছিলে যে মেজদা?
কাল শুয়েছিলাম? আচ্ছা, আচ্ছা, আজ তবে বাঁদিকে।
যেই বলা, অমনি পটলের ক্ষুদ্র মস্তক লেপের ভিতর হইতে উঁচু