সাধ্য নাই যে, বলে এই মানুষটাই মূহুর্তকাল পূর্বে ওরূপভাবে চীৎকার করিতেছিল!
গিরীশের নজরে কোনদিন কিছু পড়ে না; কিন্তু আজ কেমন করিয়া জানি না, তাঁহার দৃষ্টিশক্তি আশ্চর্য নৈপুণ্য লাভ করিল। শৈলর প্রতি চাহিয়া কহিলেন, তােমার গায়ে গয়না দেখচি নে কেন ছােটবৌমা?
শৈল অধোমুখে স্থির হইয়া রহিল।
গিরীশের কণ্ঠস্বর পুনরায় এক এক পর্দা চড়িতে লাগিল—ঐহতভাগা শুয়ার বেচে খেয়েচে। গয়না কার? আমার। ওকে আমি জেলে দিয়ে তবে ছাড়ব, ইত্যাদি ইত্যাদি।
বাইশে মকদ্দমার দিন অপরাহ্নবেলায় হরিশ মুখ কালি করিয়া হুগলীর আদালত হইতে বাটী ফিরিয়া আসিলেন এবং ধড়াচূড়া না ছাড়িয়া বিছানায় শুইয়া পড়িলেন।
নয়নতারা কাঁদ-কাঁদ হইয়া সহস্র প্রশ্ন করিতে লাগিল; খবর পাইয়া সিদ্ধেশ্বরী ছুটিয়া আসিয়া পড়িলেন। কিন্তু হরিশ সেই যে পাশ ফিরিয়া নীরব হইয়া রহিলেন, কেহই তাঁহার মুখ হইতে একটা জবাবও বাহির করিতে পারি না।
মকদ্দমায় যে হার হইয়াছে তাহাতে সংশয় নাই,—দুই জায়ে নিরন্তর বুঝাইতে লাগিলেন—মকদ্দমায় হার-জিত আছেই—ছাড়া এখনও হাইকোর্ট আছে, বিলাতে আপীল করা আছে—এরই মধ্যে এমন করিয়া ভাঙিয়া পড়িবার কিছুমাত্র হেতু নেই।
কিন্তু আশ্চর্য এই যে, এই দুটি স্ত্রীলোকের যে আশা-ভরসা ছিল, নিজে উকিল হইয়াও হরিশের তাহার কণামাত্রও দেখা গেল না।
সিদ্ধেশ্বরী আর সহ্য করতে না পারিয়া হরিশের হাত ধরিয়া বলিলেন, মেজঠাকুরপো, আমি বলছি, তোমাদের হার হবে না। যত টাকা লাগে আমি দেব, তুমি হাইকোর্ট কর। আমি আশীর্বাদ করচি তুমি জিতবেই।
এতক্ষণে হরিশ মুখ ফিরাইয়া মাথা নাড়িয়া বলিলেন, না বৌঠান,