বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:নীলগঞ্জের ফালমন সাহেব - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 —বোসো। জিরোও, বড্ড রদ্দুর।

 কি সুন্দর নীল আকাশ কাশফুলে ভরা বিস্তীর্ণ মাঠের ওপরে হুমড়ি খেয়ে আছে। সাধারণ ধরনের নীল নয়, সে এক অদ্ভুত ময়ূরকণ্ঠি রংয়ের নীল। ওপার থেকে হু হু হাওয়া বইচে, গণেশদাদার মাথার সাদা চুল বাতাসে কাশফুলের মত উড়চে। আমার কাছে ছবিটি বেশ লাগে।

 গণেশদাদা এইবার চালভাজা খাওয়া শেষ করে নদীর পাড় বেয়ে জলে নেমে দুহাতে আজ্‌লা করে জল খেয়ে নিয়ে সরস তৃপ্তির সঙ্গে ‘আ’ বলে একটি দীর্ঘস্বর উচ্চারণ করলে। আমার কাছে এসে বললে—তামুক খাবা?

 —খাইনে।

 —দাঁড়াও সাজি। মোর দা-কাটা খরসান তামাক বড্ড তলব। কিছু নেই, শুধু তামাক আর গুড়। বাজারের তামুকে চুন মেশায়। বলি হ্যাদে দাদাঠাকুর, একটু শুধোও দিকি?

 —কি?

 —সেই ইন্‌জিরি। মুই মুখস্ত বলবো? ওভার মানে ওপর, ওয়াটার মানে জল, বাড্ মানে পাখী, বালির ইন্‌জিরি স্যাণ্ড, মাছের ইন্‌জিরি ফ্লাই—

 —উঁহু—

 —কি, মাছের ইন্‌জিরি ফ্লাই নয়?

 —না। তবে কি এ্যাণ্ট?

 —না, এ্যাণ্ট মানে পিঁপড়ে। মাছের ইংরিজি ফিশ্, মাছির ইংরিজি ফ্লাই।

 —হ্যাঁ, ঠিক ঠিক। বলি হ্যাদে বয়েস হয়েচে আজকাল অনেক, সব কথা ঝক্করে মনে পড়ে না, বেস্মরণ হয়ে যাই। আর তুমি না এলি তো চর্চা হয় না, সব মুরুক্ষু—কার সঙ্গে ইন্‌জিরি বলবো বলো দিকি?

১১৮