পাতা:নেতাজীর জীবনী ও বাণী - নৃপেন্দ্রনাথ সিংহ.pdf/১০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯২
সুভাষচন্দ্রের জীবনী ও বাণী

অবতীর্ণ হই “তোমার পতাকা যারে দাও তারে বহিবারে দাও শকতি”। এখন পর্য্যন্ত ভগবান সে প্রার্থনা সফল করিয়াছেন। তাই আমি বড় সুখী—সময়ে সময়ে মনে হয় আমার মত সুখী জগতে কয়জন আছে! এখন এই বৃত্তাকার উন্নত প্রাচীরের বাহিরে যাইবার আশা যে পরিমাণে সুদূর পরাহত হইতেছে সেই পরিমাণে আমার চিত্ত শান্ত ও উদ্বেগ শূন্য হইয়া আসিতেছে। অন্তরের মধ্যে বাস করা ও অন্তরের আত্মবিকাশের স্রোতে জীবনতরী ভাসাইয়া দেওয়ার মধ্যে পরম শান্তি আছে এবং বেশী দিন রুদ্ধ অবস্থায় বাস করিতে হইলে অন্তরের শান্তিই একমাত্র সম্বল—তাই সুদীর্ঘ কারাবাসের সম্ভাবনায় আমি এক অপূর্ব্ব শান্তি পাইতেছি।

 Emerson বলিয়াছেন “We must live from within”

 যে মাপকাঠির দ্বারা আমাদের এ (বন্দীদের) বিচার করিতে হইবে তাহা অন্তরের বাহিরের নয়। কারণ বাহিরের মাপকাঠিতে আমাদের জীবনের মূল্য শূন্যবৎ। এইখানে যদি জীবনে যবনিকা পতন হয় তবে বাস্তব সংসারের উপর আমাদের জীবনের স্থায়ী ছাপ নাও থাকিতে পারে। কিন্তু জীবনে যদি আদর্শকে বাস্তবের ভিতর দিয়া ফুটাইয়া তুলিবার সুযোগ না পাই তাহা হইলেও আমার জীবন ব্যর্থ হইবে না। মহান আদর্শ যদি প্রাণের মধ্যে গ্রহণ করিয়া থাকি—কায়মন যদি সেই মহান আদর্শের সুরে বাঁধিয়া থাকি আদর্শের সহিত যদি নিজের অস্তিত্ব মিশিয়া থাকে—তাহা হইলে আমি সন্তুষ্ট। আমার জীবন জগতের কাছে ব্যর্থ হইলেও আমার (এবং বোধ হয় ভাগ্য বিধাতার) কাছে ব্যর্থ নয়। জগতে সব কিছুই ক্ষণভঙ্গুর শুধু একটা বস্তু ভাঙ্গে না বা নষ্ট হয় না। আমাদের আদর্শ অবিনশ্বর। ভাবকে কি প্রাচীরের