পাতা:নৈবেদ্য - জলধর সেন.pdf/১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৈবেদ্য ভিতর কঁাপিয়া উঠিল। তিনি আমাকে দেখিয়া অধিক বেগে। কঁাদিয়া উঠিলেন, তাহার পর আমার পায়ের উপর আছড়াইয়া পড়িয়া বলিলেন,- “সর্বনাশ হয়েছে গো, পরের তাগা হারিয়ে বসে আছি ! এখন আমাদের কি উপায় হবে!” ছাতাটি হাতে করিয়াই আমি শানের উপর বসিয়া পড়িলাম। পৃথিবী আমার চক্ষের উপর ঘুরিতে লাগিল; চতুর্দিক অন্ধকার দেখিলাম। পািনর টাকা বেতনের কম্পোজিটর আমি, বসু মহাশয়ের দুইশত টাকা মূল্যের তাগা আমি কি রকম করিয়া তাহাকে ফিরাইয়া দিব! জগৎ শূন্তময় বোধ হইল। অনেকক্ষণ ভাবিয়া যখন কিছুই স্থির করিতে পারিলাম না, তখন অগত্যা নিরাশার সাস্তুনায় বুক বাধিতে হইল। কিরূপে তাগা হারাইল, তাহার কারণানুসন্ধানে জানিতে পারিলাম, আমার স্ত্রীর হাতে তাগা দুগাছা ঢলঢল করায় তিনি তাহা খুলিয়া বালিশের নীচে রাখিয়া কলে হাত মুখ ধুইতে গিয়াছিলেন ; সেখান হইতে ফিরিয়া আসিয়া অন্য কাৰ্য্যে ব্যস্ত ছিলেন ; তাগার কথা মনে ছিল না। হঠাৎ তাগার কথা মনে পড়ায়, তিনি তাগা জোড়াটা আঁচলে ৰাধিয়া রান্না করিতে যাইবেন ভাবিলেন । এবং বালিশের নীচে হইতে তাহা আনিতে গেলেন। দরজা খোলা ছিল, বালিশ তুলিয়াই দেখেন তাগা নাই ! ঘরের সর্বস্থান অনুসন্ধান করিয়াও আর তাহা মিলিল না । হৃদয়ের আগ্রহে যদি খোয়া জিনিস পাওয়া যাইত, তাহা হইলে পুত্রহারা জননীর রোদন ব্যর্থ হইত না ! একটা চিন্তা আমার সর্বাপেক্ষা কষ্টকর হইয়াছিল। বসু মহাশয়কে যদি বলি তাগা জোড়াটা হরাইয়া গিয়াছে, তাহা হইলে তিনি কি বিশ্বাস করিবেন? আমি গরীব; তঁহার এবং তঁহার স্ত্রীর যদি মনে হয়। আমি তাগা বিক্রয় করিয়া খাইয়াছি, তবে আমি কেমন করিয়া তাহাকে বিশ্বাস করাইব V