পাতা:নৈবেদ্য - জলধর সেন.pdf/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*ie । আমির সমস্ত রাত্রি বসিয়া কাটাইতেছিল। ক্ৰন্দনের শব্দে সে বুঝিল, সব ফুরাইয়াছে! আর সে সেখানে বসিয়া থাকিতে পারিল না ; সে ছুটিয়া গ্রামের মধ্যে প্ৰবেশ করিল। তাহার পর সেই অন্ধকার রাত্রে বাঁশতলা দিয়া, স্যাওড়াবন পার হইয়া, ধানের জমি অতিক্রম করিয়া, কালকাসিন্দার বেড়া ডিঙ্গাইয়া পুকুরের বাধা ঘাটে গিয়া বসিল, দুই হাতে মুখ ঢাকিয়া ফুকরাইয়া কাদিতে লাগিল। শর্বরী প্ৰভাতকল্প, পূর্ব গগন ঈষৎ পরিষ্কার হইয়াছে, আকাশের স্নান নক্ষত্রের প্রতিবিম্ব পুকুরের জলে পড়িয়াছে, ধীরে ধীরে শীতল সমীরণ আমিরের দীর্ঘ কেশগুচ্ছ কম্পিত করিতেছে। আমির জলের ধারে নিশ্চলভাবে বসিয়া থাকিল, কেবল এক একবার দীর্ঘনিঃশ্বাস তাহার যন্ত্রণামথিত বক্ষঃস্থল ভেদ করিয়া শূন্যে বিলীন হইতে লাগিল। সুৰ্য্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে পথে “বল হরি, হরিবোল” শব্দ উঠিল। সেই শব্দে আমিরের সংজ্ঞা হইল, সে উঠিয়া দাড়াইল। উন্মত্তের ষ্ঠায় ধানের ক্ষেতের ভিতর দিয়া দূরে দূরে মৃতদেহের অনুসরণ করিতে লাগিল। এক ক্রোশ দূরে কালীগঙ্গা নদী। নদীতীরে শ্মশান-ঘাটে ইন্দুর মৃতদেহ নামান হইল, শববাহকগণ চিতার উপর সেই পুষ্পময় দেহ তুলিয়া দিল। দীর্ঘ কেশ লুটাইয়া পড়িয়াছে, সৰ্ব্বাঙ্গ শ্বেত বস্ত্ৰে আবৃত, চক্ষু নিমীলিত, এত কঠিন রোগেও মুখের শোভা নষ্ট হয় নাই; মৃত্যুর যন্ত্রণহীন, চিন্তারহিত, সঙ্কোচগৃন্য ক্ৰোড়ে শয়ন করিয়া যুবতী বিধবা নিদ্রা যাইতেছে। একটা গাছের আড়াল হইতে আমির নিৰ্ণিমেষ নেত্ৰে সেই অন্তিম শোভা নিরীক্ষণ করিতে লাগিল। আজ আর পাগল কিছুতেই হৃদয়কে সংযত করিতে পারিল না । তিন বৎসর ধরিয়া হৃদয়ের সহিত মহাসংগ্রামে সে জয়ী *ইয়াছে, আজ তাহার দৃঢ়তা ও ধৈৰ্য্যের বাঁধ ভাঙ্গিয়া গেল, আজ তাহার পরাজয়ের দিন। উন্মত্তের ন্যায় ছুটয়া সে ইন্দুর চিতার উপর আসিয়া My