পাতা:নৌকাডুবি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 রমেশ ভাবিতে লাগিল, কমলার স্বামী যে আর-কোনো রমেশ নিশ্চয়ই অক্ষয়ের মনে সেই ধারণাই আছে— নহিলে সে এত ক্ষণে কেবল ইঙ্গিত করিয়া থামিয়া থাকিত না, পাড়াসুদ্ধ গোল করিয়া বেড়াইত। অতএব এই বেলা যাহা-হয়-একটা উপায় অবলম্বন করা দরকার।

 এমন সময় আর-একটা ডাকের চিঠি আসিল। রমেশ খুলিয়া দেখিল সে চিঠি স্ত্রীবিদ্যালয়ের কর্মীর নিকট হইতে আসিয়াছে। তিনি লিখিয়াছেন, কমলা অত্যন্ত কাতর হইয়া পড়িয়াছে, তাহাকে এ অবস্থায় ছুটির সময় বিদ্যালয়ের বোর্ডিঙে রাখা তিনি সংগত বোধ করেন না। আগামী শনিবারে ইস্কুল হইয়া ছুটি হইব্র, সেই সময়ে তাহাকে বিদ্যালয় হইতে বাড়ি লইয়া যাইবার ব্যবস্থা করা নিতান্ত আবশ্যক।

 আগামী শনিবারে কমলাকে বিদ্যালয় হইতে লইয়া আসিতে হইবে। আগামী রবিবারে রমেশের বিবাহ।

 “রমেশবাবু, আমাকে মাপ করিতে হইবে।”— এই বলিয়া অক্ষয় ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিল। কহিল, “এমন একটা সামান্য ঠাট্টায় আপনি যে এত রাগ করিবেন তাহা আগে জানিলে আমি ও কথা তুলিতাম না। ঠাট্টার মধ্যে কিছু সত্য থাকিলেই লোকে চটিয়া ওঠে, কিন্তু যাহা একেবারে অমূলক তাহা লইয়া আপনি সকলের সাক্ষাতে এত রাগারাগি করিলেন কেন। অন্নদাবাবু তো কাল হইতে আমাকে ভর্ৎসনা করিতেছেন—হেমনলিনী আমার সঙ্গে কথা বন্ধ করিয়াছেন। আজ সালে তাঁহাদের ওখানে গিয়াছিলাম, তিনি ঘর ছাড়িয়া চলিয়াই গেলেন। আমি এমন কী অপরাধ করিয়াছিলাম বলুন দেখি।”

 রমেশ কহিল, “এ-সমস্ত বিচার যথাসময়ে হইবে। এখন আমাকে মাপ করিবেন— আমার বিশেষ একটা প্রয়োজন আছে।”

৫৬