পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চনদের তীরে

সফল করবার জন্যে কার্যক্ষেত্রে অবতীর্ণ হ’তে তারা চায় না। আলেকজাণ্ডারের প্রকৃতি ছিল অন্য ধাতুতে গড়া। কাজে ফাঁকি দিয়ে তিনি স্বপ্ন দেখতেন না, স্বপ্নের মধ্যেই থাকত তাঁর নতুন নতুন কাজের বীজ।

 আচম্বিতে শিবিরের বাইরে উঠল জনতার বিপুল কোলাহল, আলেকজাণ্ডার বই থেকে মুখ তুলে গোলমালের কারণ অনুমান করবার চেষ্টা করলেন।

 শুনলেন, নানা কণ্ঠে চীৎকার হচ্ছে—“আমরা ভারতবর্ষে যেতে চাই না!”—“ভারতবর্ষ আক্রমণ ক’রে আমাদের কোনো লাভ নেই!” “কে জানে সেখানে আমাদের অদৃষ্টে কী আছে?”

 আলেকজাণ্ডার সচমকে ভাবলেন,—একি বিদ্রোহ? তাঁর নিজের হাতে গড়া বহুযুদ্ধবিজয়ী এই মহাসাহসী গ্রীক সৈন্যদল, যাদের মুখ চেয়ে তিনি নিজে কত আত্মত্যাগ করেছেন, যারা তাঁরই দৌলতে কোনোওদিন পরাজয়ের মুখ দেখে নি,— তারাও আজ ভারতবর্ষের ভয়ে ভীত, তাঁর কথাও শুনতে নারাজ?

 এই সেদিনের কথা তাঁর মনে পড়ল। প্রখর সূর্যকরে জ্বলন্ত এসিয়ার তপ্ত বুক মাড়িয়ে সসৈন্যে তিনি অগ্রসর হয়েছেন,— বাতাসে অগ্নিদাহের জ্বালা, জলবিন্দুশূন্য পথ আকাশের শেষ-সীমায় কোথায় হারিয়ে গেছে কেউ জানে না, মাঝে মাঝে শুষ্ক শৈল, লোকালয়ের চিহ্নমাত্র নেই!

 কয়েকজন সৈনিক যখন একটি গর্তের মধ্যে একটুখানি জল আবিষ্কার করলে,—তখন সেই বিপুল বাহিনীর হাজার হাজার লোকের দেহ দারুণ পিপাসায় ছটফট করছে! চারিদিকে জলাভাবে হাহাকার!

 ইস্পাতের শিরস্ত্রাণ খুলে জনৈক সৈনিক জলটুকু সংগ্রহ করলে। কিন্তু সে জল একজনমাত্র লোকের পক্ষে যথেষ্ট নয়!

১৬