পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চনদের তীরে

গ্রীকের সামনে পঞ্চাশ হাজার ভারতবাসী কতক্ষণ দাঁড়াতে পারবে?”

 —“তাহলে আপনি কি বলেন রাজকুমার, ভারতবাসীরা নিশ্চেষ্ট ভাবে ব’সে ব’সে করুণ নেত্রে দেখবে, তাদের স্বদেশের বুকের উপর দিয়ে বিদেশী যবনদের উম্মত্ত বিজয়-যাত্রা? সে দৃশ্যটা খুব জম্‌কালো হবে সন্দেহ নেই, কিন্তু আমাদের মনুষ্যত্বের — আমাদের পুরুষত্বের মর্যাদা কোথায় থাকবে?

 চন্দ্রগুপ্ত বললেন, “না সুবন্ধু, আমি তা বলি না। নিশ্চেষ্টভাবে দাসত্ব-শৃঙ্খল পরার চেয়ে মানুষের বড় কলঙ্ক আর নেই। চেয়ে মৃত্যু শ্রেয়। আমার চোখের সামনে যদি একটা উজ্জ্বল স্বপ্ন না থাকত, তাহ’লে আমিও আজ বীরের মতন প্রাণ দেবার জন্যে মহারাজ পুরুর পাশে গিয়ে দাঁড়াতুম।”

 “—সে কী স্বপ্ন রাজকুমার?”

 সুদূর দিকচক্রবাল-রেখায় যেখানে পশ্চিম আকাশের আলোকনেত্র ধীরে ধীরে মুদ্রিত হয়ে আসছে, সেই দিকে নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে চন্দ্রগুপ্ত কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে রইলেন। তারপর পরিপূর্ণ দৃপ্ত স্বরে বললেন, “অখণ্ড ভারত-সাম্রাজ্যের স্বপ্ন। এই গ্রীক ঝটিকা থেকে যদি আত্মরক্ষা করতে পারো তাহ'লে তুমি দেখে নিও সুবন্ধু, মগধের সিংহাসন অধিকার করতে পারলে আমার বাহু বিস্তৃত হবে হিন্দুকুশের শিখর পর্যন্ত। মগধের অগাধ সৈন্য-সাগরের মধ্যে মুষ্টিমেয় গ্রীক দস্যুরা যাবে অতলে তলিয়ে। সমগ্র বিচ্ছিন্ন ভারতকে আমি একত্রে দাঁড় করাবো এক বিশাল রাজছত্রতলে।”

 —“আপনার উজ্জ্বল স্বপ্ন সত্য হোক্ সার্থক হোক। কিন্তু তার আগেই মহারাজা পুরু যদি গ্রীকদের পরাজিত করেন?”

 —“তাহ’লে অসম্ভবকে সম্ভবপর করেছেন ব’লে মহাবীর পুরুকে আমি অভিবাদন করবো।”

৭২