পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দশম পরিচ্ছেদ

বিশ্বাসঘাতকের মৃত্যুফাঁদ

 মহাভারতের রক্তে রাঙা কুরুক্ষেত্র! ভীষ্ম-দ্রোণের ধনুকের টঙ্কার, যুধিষ্ঠিরের শান্ত বাণী, ভীমার্জনের সিংহনাদ, দুর্যোধনের হুঙ্কার, শ্রীকৃষ্ণের চালিত যুদ্ধরথের ঘর্ঘর-ধ্বনি, গান্ধারী শুভদ্রা ও উত্তরার পাথর-গলানো করুণ আর্তনাদ কত কাল আগে স্তব্ধ হয়েছে, এ বিপুল প্রান্তর কতকাল ধ’রে জনশূন্য স্মৃতির মরুভূমির মতো পড়েছিল!

 আজ আবার সেখানে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছে মুক্ত জনতার কলকণ্ঠ! একদিন এই কুরুক্ষেত্রে গিয়ে গৃহবিবাদে মত্ত হয়ে মহা মহা বীররা করেছিলেন স্বেচ্ছায় ভারতের ক্ষাত্র-বীর্যের সমাধি রচনা, কিন্তু আজ সেই সমাধির মধ্যেই আবার জাগ্রত হয়েছে ভারতের চিরপুরাতন কিন্তু চির-নূতন আত্মা, হিন্দুস্থানকে যবনের কবল থেকে মুক্ত করবার জন্যে।

 শিবিরের পর শিবিরের সারি, প্রত্যেক শিবিরের উপরে উড়ছে রক্তপতাকার পর রক্তপতাকা! শত শত রথ, অসংখ্য হস্তী, দলে দলে অশ্ব! কোথাও চলেছে রণ-বাঘের মহলা, কোথাও হচ্ছে অস্ত্রক্রীড়া এবং কোথাও বসেছে গল্পগুজব বা পরামর্শের সভা!

 এই প্রকাণ্ড শিবির-নগরের ঠিক মাঝখানে রয়েছে মস্ত বড় এক তাঁবু—তাকে তাঁবু না ব’লে কাপড়ে-তৈরি প্রাসাদ বললেই ঠিক হয়! তার উপরে উড়ছে ময়ুর-আঁকা বৃহৎ এক পতাকা, মৌর্য রাজবংশের নিজস্ব নিদর্শন!

১১
৯৩