পাতা:পঞ্চভূত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

কাব্যের তাৎপর্য

আনন্দময় বেদনাময় ইচ্ছাশক্তি পঙ্কের মধ্য হইতে পঙ্কজবন জাগ্রত করিয়া তুলিতেছেন এবং সেই পঙ্কজবনের উপরে আজ ভক্তের চক্ষে সৌন্দর্যরূপা লক্ষ্মী এবং ভাবরূপ সরস্বতীর অধিষ্ঠান হইয়াছে।’

 ক্ষিতি কহিল, ‘আমাদের প্রত্যেকের ভিতরে যে এমন একটা বৃহৎ কাব্যকাণ্ড চলিতেছে শুনিয়া পুলকিত হইলাম। কিন্তু সরলা কায়াটির প্রতি চঞ্চলস্বভাব আত্মাটার ব্যবহার সন্তোষজনক নহে, ইহা স্বীকার করিতেই হইবে। আমি একান্তমনে আশা করি, যেন আমার জীবাত্মা এরূপ চপলতা প্রকাশ না করিয়া অন্তত কিছু দীর্ঘকাল দেহ-দেবযানীর আশ্রমে স্থায়ী ভাবে বাস করে। তোমরাও সেই আশীর্বাদ করো।’

 সমীর কহিল, ‘ভ্রাতঃ ব্যোম, তোমার মুখে তো কখনো শাস্ত্রবিরুদ্ধ কথা শুনি নাই। তুমি কেন আজ এমন খৃস্টানের মতো কথা কহিলে। জীবাত্মা স্বর্গ হইতে সংসারাশ্রমে প্রেরিত হইয়া দেহের সঙ্গ লাভ করিয়া সুখদুঃখের মধ্য দিয়া পরিণতি প্রাপ্ত হইতেছে, এ সকল মত তো তোমার পূর্বমতের সহিত মিলিতেছে না।’

 ব্যোম কহিল, এ সকল কথায় মতের মিল করিবার চেষ্টা করিয়ো না। এ সকল গোড়াকার কথা লইয়া আমি কোনো মতের সহিতই বিবাদ করি না। জীবনযাত্রার ব্যবসায়ে প্রত্যেক জাতিই নিজরাজ্যপ্রচলিত মুদ্রা লইয়া মূলধন সংগ্রহ করে; কথাটা এই, দেখিতে হইবে ব্যাবসা চলে কি না। জীব সুখদুঃখ-বিপদসম্পদের মধ্যে শিক্ষালাভ করিবার জন্য সংসারশিক্ষণশালায় প্রেরিত হইয়াছে এই মতটিকে মূলধন করিয়া, লইয়া জীবনযাত্রা সুচারুরূপে চলে, অতএব আমার মতে এ মুদ্রাটি মেকি নহে। আবার যখন প্রসঙ্গক্রমে অবসর উপস্থিত হইবে তখন দেখাইয়া দিব যে, আমি যে ব্যাঙ্ক্‌নোটটি লইয়া জীবনবাণিজ্যে প্রবৃত্ত হইয়াছি, বিশ্ববিধাতার ব্যাঙ্কে সে নোটও গ্রাহ্য হইয়া থাকে।’

৯৭