পাতা:পঞ্চভূত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

অখণ্ডতা

অস্থিচর্মের মধ্যে সেই প্রকার সুগভীর আত্মীয়তা স্থাপনে প্রবৃত্ত হয়, তবে সেটা তেমন বেশ স্বাভাবিক এবং মনোহর-রূপে সম্পন্ন হয় না। লেখক এবং শ্রোতার সম্পর্কটাও সেইরূপ অস্বাভাবিক, অসদৃশ। হে চতুরানন, পাপের যেমন শাস্তিই বিধান কর যেন আর জন্মে ডাক্তারের ঘোড়া, মাতালের স্ত্রী এবং প্রবন্ধলেখকের বন্ধু হইয়া জন্মগ্রহণ না করি।’

 ব্যোম একটা পরিহাস করিতে চেষ্টা করিল; কহিল, ‘একে তো বন্ধু অর্থেই বন্ধন, তাহার উপরে প্রবন্ধ-বন্ধন হইলে ফাঁসের উপরে ফাঁস হয়— গণ্ডস্যোপরি বিস্ফোটকম্।

 দীপ্তি কহিল, ‘হাসিবার জন্য দুইটি বৎসর সময় প্রার্থনা করি; ইতিমধ্যে পাণিনি অমরকোষ এবং ধাতুপাঠ আয়ত্ত করিয়া লইতে হইবে।’

 শুনিয়া ব্যোম অত্যন্ত কৌতুকলাভ করিল। হাসিতে হাসিতে কহিল, ‘বড়ো চমৎকার বলিয়াছ। আমার একটা গল্প মনে পড়িতেছে—’

 স্রোতস্বিনী কহিল, ‘তোমরা সমীরের লেখাটা আজ আর শুনিতে দিবে না দেখিতেছি। সমীর, তুমি পড়ে, উহাদের কথায় কর্ণপাত করিয়ো না।’

 স্রোতস্বিনীর আদেশের বিরুদ্ধে কেহ আর আপত্তি করিল না। এমনকি, স্বয়ং ক্ষিতি শেল্‌ফের উপর হইতে ডায়ারির খাতাটি পাড়িয়া আনিল এবং নিতান্ত নিরীহ নিরুপায়ের মতো সংযত হইয়া বসিয়া রহিল।

 সমীর পড়িতে লাগিল, ‘মানুষকে বাধ্য হইয়া পদে পদে মনের সাহায্য লইতে হয়, এই জন্য ভিতরে ভিতরে আমরা সেটাকে দেখিতে পারি না। মন আমাদের অনেক উপকার করে কিন্তু তাহার স্বভাব এমনই যে, আমাদের সঙ্গে কিছুতেই সে সম্পূর্ণ মিলিয়া মিশিয়া থাকিতে পারে না। সর্বদা খিট্‌খিট্‌ করে, পরামর্শ দেয়, উপদেশ দিতে আসে,

৭১