পাতা:পঞ্চভূত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

গদ্য ও পদ্য

আমাদের মনের কৃত্রিম রচনা, এ কথা অপ্রমাণ করা বড়ো কঠিন।’

 ক্ষিতি মহা বিরক্ত হইয়া উঠিয়া কহিলেন, ‘তোমরা সকলে মিলিয়া ধান ভানিতে শিবের গান তুলিয়াছ। কথাটা ছিল এই, ভাবপ্রকাশের জন্য পদ্যের কোনো আবশ্যক আছে কি না। তোমরা তাহা হইতে একেবারে সমুদ্র পার হইয়া সৃষ্টিতত্ত্ব লয়তত্ত্ব মায়াবাদ প্রভৃতি চোরাবালির মধ্যে গিয়া উত্তীর্ণ হইয়াছ। আমার বিশ্বাস, ভাবপ্রকাশের জন্ম ছন্দের সৃষ্টি হয় নাই। ছোটো ছেলেরা যেমন ছড়া ভালোবাসে তাহার ভাবমাধুর্ষের জন্য নহে, কেবল তাহার ছন্দোবদ্ধ ধ্বনির জন্য, তেমনি অসভ্য অবস্থায় অর্থহীন কথার ঝংকারমাত্রই কানে ভালো লাগিত। এই জন্য অর্থহীন ছড়াই মানুষের সর্বপ্রথম কবিত্ব। মানুষের এবং জাতির বয়স ক্রমে যত বাড়িতে থাকে ততই ছন্দের সঙ্গে অর্থ সংযোগ না করিলে তাহার সম্পূর্ণ তৃপ্তি হয় না। কিন্তু বয়ঃপ্রাপ্ত হইলেও অনেক সময়ে মানুষের মধ্যে দুই-একটা গোপন ছায়াময় স্থানে বালকঅংশ থাকিয়া যায়? ধ্বনিপ্রিয়তা ছন্দপ্রিয়তা সেই গুপ্ত বালকের স্বভাব। আমাদের বয়ঃপ্রাপ্ত অংশ অর্থ চাহে, ভাব চাহে; আমাদের অপরিণত অংশ ধ্বনি চাহে, ছন্দ চাহে।’

 দীপ্তি গ্রীবা বক্র করিয়া কহিলেন, ‘ভাগ্যে আমাদের সমস্ত অংশ বয়ঃপ্রাপ্ত হইয়া ওঠে না। মানুষের নাবালক-অংশটিকে আমি অন্তরের সহিত ধন্যবাদ দিই, তাহারই কল্যাণে জগতে যা কিছু মিষ্টত্ব আছে।’

 সমীর কহিলেন, ‘যে ব্যক্তি একেবারে পুরোপুরি পাকিয়া গিয়াছে সে’ই জগতের জ্যাঠা ছেলে। কোনো রকমের খেলা, কোনো রকমের ছেলেমানুষি তাহার পছন্দসই নহে। আমাদের আধুনিক হিন্দুজাতটা পৃথিবীর মধ্যে সব চেয়ে জ্যাঠা জাত, অত্যন্ত বেশি মাত্রায় পাকামি করিয়া থাকে, অথচ নানান বিষয়ে কাঁচা। জ্যাঠা ছেলের এবং জ্যাঠা

৮৭