পথিক উপুড় হয়ে শুয়ে পড়েছে মাটিতে,
ঘন আঁধির ভিতর থেকে উঠছে ঘরহারা গোরুর উতরোল ডাক,
দুরে নদীর ঘাটে হৈ হৈ রব।
বোঝা গেল না কোন্দিকে হুড়মুড় দুড়্দাড় ক’রে
কিসের ওটা ভাঙ্চুর।
দুর্দুর করে বুক,
কী হোলো, কী হোলো ভাবনা।
কাকগুলো পড়ছে মুখ থুবড়িয়ে মাটিতে,
ঠোঁট দিয়ে ঘাস ধরছে কামড়িয়ে,
ধাক্কা খেয়ে যাচ্ছে সরে সরে,
ঝট্পট্ করছে পাখা দুটো।
নদীপথে ঝড়ের মুখে বাঁশঝাড়ের লুটোপুটি,
ডালগুলো ডাইনে বাঁয়ে আছাড় খায়,
দোহাই পাড়ে মরিয়া হয়ে।
তীক্ষ্ণ হাওয়া সাঁই সাঁই শান দিচ্ছে আর চালাচ্ছে ছুরি
অন্ধকারের পাঁজরের ভিতর দিয়ে।
জলে স্থলে শূন্যে উঠেছে
ঘুরপাক-খাওয়া আতঙ্ক।
হঠাৎ সোঁদা গন্ধের দীর্ঘনিশ্বাস উঠল মাটি থেকে,
মুহূর্তে এসে পড়ল বৃষ্টি প্রবল ঝাপ্টায়,
হাওয়ার চোটে গুঁড়োনো জলে ফোঁটা,
পাতলা পর্দায় ঢেকে ফেললে সমস্ত বন,
আড়াল করলে মন্দিরের চুড়ো,
কাঁসর ঘণ্টার ঢং ঢং শব্দের দিল মুখচাপা।
রাত তিন পহরে থেমে গেল ঝড়বৃষ্টি,
কালী হয়ে এল অন্ধকার নিকষ পাথরের মতো;
পাতা:পত্রপুট-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৪৬
অবয়ব
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পত্রপুট
৩৫