পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/২৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 আজ ঠিক চৌদ্দমাস আমি জেলে। এর মধ্যে এগার মাস কাটলো সুদূর ব্রহ্মদেশে। সময়ে সময়ে মনে হয় যে, দীর্ঘ চৌদ্দমাস দেখতে দেখতে গেল; কিন্তু অন্য সময়ে মনে হয় যেন কত যুগ ধ’রে এখানে রয়েছি। এ যেন আমার ঘর-বাড়ী, কারাগারের বাহিরের কথা যেন স্বপ্নের মত প্রহেলিকার মত বোধ হয়; যেন ইহজগতে একমাত্র সত্য হচ্ছে লৌহের গারদ ও প্রস্তরের প্রাচীর। বাস্তবিক এ একটা নূতন বিচিত্র রাজ্য। আমার সময়ে সময়ে মনে হয়, যে জেলখানা দেখে নাই সে জগতের কিছুই দেখে নাই। তার কাছে জগতের অনেক সত্য প্রত্যক্ষীভূত হয় নাই। আমি নিজের মনকে বিশ্লেষণ করে দেখেছি যে, এই রকম চিন্তা ঈর্ষা-প্রসূত নয়। আমি প্রকৃতপক্ষে জেলখানায় এসে অনেক শিখেছি; অনেক সত্য যাহা এক সময় ছায়ার মত ছিল, এখন আমার নিকট সুস্পষ্ট হয়েছে, অনেক নূতন অনুভূতিও আমার জীবনকে সবল ও গভীর ক’রে তুলেছে। যদি ভগবান কোনও দিন সুযোগ দেন ও মুখে ভাষা দেন—তবে সে সব কথা দেশবাসীকে জানাবার আকাঙক্ষা ও স্পর্দ্ধা আছে।

 জেলে আছি—তাতে দুঃখ নাই। মায়ের জন্যে দুঃখভোগ করা সে ত’ গৌরবের কথা! Suffering-এর মধ্যে আনন্দ আছে, একথা বিশ্বাস করুন। তা না হলে লোক পাগল হয়ে যেত, তা না হলে কষ্টের মধ্যে লোক হৃদয়ের আনন্দে ভরপূর হয়ে হাসে কি করে? যে বস্তুটা বাহির থেকে suffering ব’লে বোধ হয়—তার ভিতর থেকে দেখলে আনন্দ বলেই বোধ হয়। অবশ্য বৎসরের মধ্যে ৩৬৫ দিন এবং দিনের মধ্যে ২৪ ঘণ্টা এ ভাব আমার থাকে না, কারণ— এখনও শৃঙ্খলের দাগ গায়ের উপর রয়েছে। তবে এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নাই যে, এই অনুভূতি অল্পাধিক ভাবে যার নাই সে না পারে Suffering-এর দ্বারা জীবনকে পরিপুষ্ট করতে না পারে Suffering-এর মধ্যে প্রকৃতিস্থ থাক্‌তে।

২৫৯