পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৩৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 ৩। আমি আগাগোড়াই বলিয়া আসিতেছি আমাকে বাধ্য হইয়া যে শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করিতে হইতেছে, আর্থিক অসাচ্ছল্যের দরুন যাহা ভোগ করা ছাড়া কোনও উপায় নাই, সেজন্য গভর্ণমেণ্টেরই উচিত ক্ষতিপূরণ করা। ন্যায়নীতি, সুবিচারের আদর্শ ইত্যাদি সর্ব্ববিধ নৈতিক বোধ বিসর্জ্জন না দিলে কাহারও পক্ষে এ দাবী উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। এসব কথা বিচার করিলে গভর্ণমেণ্ট যে প্রস্তাব করিয়াছেন উহার অপর্য্যাপ্ততা স্পষ্টতঃই চোখে পড়ে।

 ৪। গভর্ণমেণ্ট অথবা আমি এতটা স্বল্পবুদ্ধি নই যে মনে করা যাইতে পারে সুইস স্যানাটোরিয়ামে আমার চিকিৎসা সম্বন্ধে ডাক্তার সুনীলচন্দ্র বসুর মতামতকে কার্য্যকরী করাই এ প্রস্তাবের একমাত্র উদ্দেশ্য। চিকিৎসক হিসাবে তাঁহার অভিমত মূল্যবান সন্দেহ নাই; কিন্তু আমার পক্ষে উহা গ্রহণ করা তখনই সম্ভব যখন আমাকে স্বাধীনভাবে আপন ইচ্ছানুযায়ী কর্ত্তব্য নির্দ্ধারণ করিতে দেওয়া হইবে।

 ৫। নির্য্যাতিত রাজনৈতিক কর্ম্মী হিসাবে কর্ত্তব্য এবং দেশের কাজে আমার ভূমিকা, ইহার সহিত সম্মানের প্রশ্নটাও জড়িত আছে—এসব কথা চিন্তা করিয়াই গভর্ণমেণ্ট প্রস্তাবে যে সকল সর্ত্ত উল্লেখ করিয়াছেন উহা গ্রহণ করিতে পারিতেছি না। তাছাড়া প্রায় আড়াই বৎসর যখন আমার জেলেই কাটিয়া গিয়াছে তখন এ সম্বন্ধে আর আলোচনার কোনও প্রশ্নও উঠে না। এখন যদি আমি উহা মানিয়া লই তাহার অর্থ দাঁড়াইবে গভর্ণমেণ্টের আচরণের বৈধতা স্বীকার করিয়া লওয়া, নীতিগতভাবে যাহা আমার পক্ষে অসম্ভব। আমরা শাসনতান্ত্রিক অধিকারের জন্যই সংগ্রাম করিতেছি; জাতির সম্মান রক্ষার দায়িত্বও আমাদের উপরই ন্যস্ত। সুতরাং উহা আমরা কোনও ক্রমেই অস্বীকার করিতে পারি না। আমার জীবন আমার নিকট যত প্রিয় তদপেক্ষা বেশী প্রিয় সম্মান রক্ষার প্রশ্ন। এবং আমি আমার জীবনের বিনিময়ে ঐ পবিত্র ও অলঙ্ঘ্য অধিকারসমূহ ত্যাগ

৩০৫