পাতা:পথের দাবী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 অপূর্ব্ব লজ্জা পাইয়া কহিল, সে তো ঠিক কথা। তাহলে তেওয়ারী আসুক, সে হয় ত সমস্ত জানে। এই বলিয়া সে ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত জিনিসগুলোর প্রতি করুণচক্ষে চাহিল।

 তাহার নিরুপায়ের মত মুখের চেহারায় ভারতী আমোদ বোধ করিল! হাসিমুখে কহিল, সে জানতে পারে আর আপনি পারেন না? আচ্ছা, কি করে জানতে হয় আপনাকে আমি শিখিয়ে দিচ্চি। এই বলিয়া সে তৎক্ষণাৎ মেঝের উপর বসিয়া পড়িয়া সুমুখের ভাঙ্গা তোরঙ্গটা হাতের কাছে টানিয়া আনিয়া কহিল, আচ্ছা, জামা-কাপড়গুলো আগে সব গুছিয়ে তুলি। এসব নিয়ে যাবার বোধ হয় তারা সময় পায়নি। এই বলিয়া সে এলোমেলো ধুতি, চাদর, পিরাণ, কোট প্রভৃতি একটির পরে একটি ভাঁজ করিয়া সাজাইয়া তুলিতে লাগিল। তাহায় শিক্ষিত হস্তের নিপুণতা কয়েক মুহূর্ত্তেই অপূর্ব্বর চোখে পড়িল। এটা কি? মুর্শিদাবাদ সিল্কের সুট বুঝি? এরকম ক’ জোড়া আছে বলুন ত?

 অপূর্ব্ব কহিল, দুজোড়া।

 ঠিক মিলেচে। এই এখানে আর এক জোড়া, এই বলিয়া সে সুট দুটি সাজাইয়া বাক্সে তুলিল। ঢাকাই ধুতি—একটা, দুটো, তিনটে;—চাদর এক, দুই, তিন,—ঠিক মিলেচে। বোধ হয় তিন জোড়াই ছিল, না?

 অপূর্ব্ব কহিল, হাঁ, আমার মনে আছে, তিন জোড়াই বটে।

 এটা কি আলপাকার কোট? কই ওয়েস্ট-কোট, প্যাণ্ট দেখচি না যে? ও—না এ যে গলা-বন্ধ দেখচি। এর সুট ছিল না, না?

 অপূর্ব্ব বলিল, না, ওটা আলাদাই বটে। ওর সুট ছিল না

 তাহাদের গুছাইয়া তুলিয়া ভারতী আর একটা হাতে তুলিয়া কহিল, এটা দেখচি ফ্লানেল সুট,—আপনি সেখানে টেনিস খেলতেন বুঝি? তাহলে একটা, দুটো, তিনটে, ওই আলনায় একটা, আপনার গায়ে একটা,—সুট তাহলে পাঁচ জোড়া না?

 অপুর্ব্ব খুশী হইয়া কহিল, ঠিক তাই। পাঁচ জোড়াই বটে।

 কাপড়ের ভাঁজের মধ্যে উজ্জ্বল কি একটা পদার্থ চোখে পড়িতে টানিয়া বাহির করিয়া কহিল, এ যে সোনার চেন, ঘড়ি গেল কোথায়?

 অপূর্ব্ব খুশী হইয়া কহিল, বাঁচা গেছে—চেনটা তারা দেখতে পায়নি। এটি আমার পিতৃদত্ত, তাঁরই স্মৃতিচিহ্ন—

 কিন্তু ঘড়িটা?

 এই যে, বলিয়া অপূর্ব্ব তাহার কোটের পকেট হইতে সোনার ঘড়ি বাহির করিয়া দেখাইল!

৩৯