—কোথাও নাই। চারিদিকে চাহিয়া দেখিল, স্নানের ঘরের কপাট খোলা। কিন্তু মিনিট পাঁচ-ছয় অপেক্ষা করিয়াও যখন কেহ আসিল না, তখন সে সন্দিগ্ধচিত্তে দরজার ভিভরে গলা বাড়াইয়া যাহা দেখিতে পাইল তাহাতে ভয়ের আর সীমা রহিল না। অপূর্ব্ব মেঝের উপর উপুড় হইয়া পড়িয়া দুপুরবেলা যাহা কিছু খাইয়াছিল সমস্ত বমি করিয়াছে, তাহার চোখ মুদিত এবং সর্ব্বাঙ্গ ঘামে ভাসিয়া যাইতেছে। কাছে গিয়া ডাকিল, অপূর্ব্ববাবু!
প্রথম ডাকেই অপূর্ব্ব চোখ মেলিয়া চাহিল, কিন্তু পরক্ষণেই আবার চোখ বুজিয়া তেমনি স্থির হইয়া রহিল। ভারতী মুহূর্ত্তকাল দ্বিধা করিল, তাহার পরেই সে অপূর্ব্বর কাছে বসিয়া মাথায় হাত দিয়া আস্তে আস্তে বলিল, উঠে বসতে হবে যে। মাথায় মুখে জল না দিলে ত শরীর শোধরাবে না অপূর্ব্ববাবু।
অপূর্ব্ব উঠিয়া বসিলে সে হাত ধরিয়া তাহাকে কলের কাছে আনিয়া জল খুলিয়া দিলে সে হাত-মুখ ধুইয়া ফেলিল। তখন ধীরে ধীরে তাহাকে তুলিয়া আনিয়া খাটের উপরে শোয়াইয়া দিয়া ভারতী গামছার অভাবে নিজের আঁচল দিয়া তাহার হাত ও পায়ের জল মুছাইয়া দিল এবং একটা হাতপাখা খুঁজিয়া আনিয়া বাতাস করিতে করিতে কহিল, এইবার একটু ঘুমোবার চেষ্টা করুন, আপনি সুস্থ না হওয়া পর্য্যন্ত আমি যাবো না।
অপূর্ব্ব লজ্জিত মৃদুকণ্ঠে কহিল, কিন্তু আপনার যে এখনো খাওয়া হয়নি।
ভারতী বলিল, খেতে আর আপনি দিলেন কই? আপনি ঘুমোন।
ঘুমিয়ে পড়লে ত আপনি চলে যাবেন না?
না, আপনার ঘুম না ভাঙা পর্য্যন্ত অপেক্ষা করব।
অপূর্ব্ব খানিকক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া সহসা জিজ্ঞাসা করিল, আচ্ছা, আপনাকে মিস ভারতী বলে ডাকলে কি আপনি রাগ করবেন?
নিশ্চয়ই করব। অথচ শুধু ভারতী বলে ডাকলে করব না।
কিন্তু অন্য সকলের সামনে?
ভারতী একটু হাসিয়া কহিল, হলই বা অন্য সকলের সামনে। কিন্তু চুপ করে একটু ঘুমোন দিকি—আমার ঢের কাজ আছে।
অপূর্ব্ব বলিল, ঘুমোতে আমার ভয় করে, আপনি পাছে ফাঁকি দিয়ে চলে যান।
কিন্তু জেগে থাকলেও যদি যাই, আপনি আটকাবেন কি করে?
অপূর্ব্ব চুপ করিয়া রহিল। ভারতী কহিল, আমাদের ম্লেচ্ছসমাজে কি সুনাম দুর্নাম বলে জিনিস নেই? আমাকে কি তার ভয় করে চলতে হয় না?
অপূর্ব্বর বুদ্ধি ঠিক প্রকৃতিস্থ ছিল না, প্রত্যুত্তরে সে একটা অদ্ভুত প্রশ্ন করিয়া
৭৩
