পাতা:পথের সঞ্চয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সমাজভেদ

সেই নিয়মগুলির মধ্যে অনেক কৃত্রিমতাও আছে, অনেক স্বাভাবিকতাও আছে।

 কিন্তু, যে-সমাজের প্রতি লক্ষ্য করিয়া এই নিয়মগুলি তৈরি হইয়াছে সেই সমাজের পরিধি বড়ো নহে এবং সে-সমাজ আত্মীয়সমাজ। সুতরাং, আমাদের আদবকায়দাগুলি ঘােরো রকমের। বাবার সামনে তামাক খাইতে নাই, গুরুঠাকুরের পায়ের ধুলা লইয়া তাঁহাকে দক্ষিণা দেওয়া কর্তব্য, ভাসুরকে দেখিলে মুখ আবৃত করা চাই এবং মামাশ্বশুরের নিকটসংস্রব বর্জনীয়। এই পরিবার বা পল্লী -মণ্ডলীর বাহিরে যে-নিয়মের ধারা চলিয়াছে তাহা মােটের উপর বর্ণভেদমূলক।

 বলিতে গেলে বর্ণাশ্রমের সূত্র আমাদের পল্লীসমাজ ও পরিবারমণ্ডলীকে হারের মতাে গাঁথিয়া তুলিয়াছে। আমরা একটা সমাপ্তিতে আসিয়াছি। ভারতবর্ষ তাহার সমাজে সমস্যার একটা সম্পূর্ণ সমাধান করিয়া বসিয়াছে এবং মনে করিয়াছে, এই ব্যবস্থাকে চিরকালের মতাে পাকা করিয়া রাখিতে পারিলেই তাহার আর-কোনাে ভাবনা নাই। এইজন্য বর্ণাশ্রমসূত্রের দ্বারা পরিবার-সমাজকে বাঁধিয়া রাখিবার বিধানকে সকল দিক হইতে দৃঢ় করিবার দিকেই আধুনিক ভারতবর্ষের সমস্ত চেষ্টা কাজ করিয়াছে।

 ভারতবর্ষের সম্মুখে যে-সমস্যা ছিল ভারতবর্ষ তাহার একটা কোনাে সমাধানে আসিয়া পৌঁছিতে পারিয়াছিল, এ কথা স্বীকার করিতেই হইবে। বিচিত্র জাতির বিরােধকে সে একরকম করিয়া মিটাইয়াছে, বিচিত্র শ্রেণীর বিরােধকে সে একরকম করিয়া ঠাণ্ডা করিয়াছে; বৃত্তিভেদের দ্বারা ভারতবর্ষে প্রতিযােগিতার দ্বন্দ্বযুদ্ধকে নিবৃত্ত করিয়াছে এবং ধন ও ক্ষমতার পার্থক্য যে-

১৫৭