পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১০
পদাবলী-মাধুর্য্য

 বঙ্গীয় জনসাধারণের সঙ্গে আমাদের এইখানে নাড়ীচ্ছেদ হইয়া গিয়াছে। তাহাদের মনোভাব এখনও এইরূপ অর্থগ্রহণের অনুকূল আছে, বিদেশী শিক্ষার গুণে আমরা খনির কাছে থাকিয়াও মণির সন্ধান লইতে ভুলিয়া গিয়াছি।

 নাম শুনিয়াই অঙ্গ এলাইয়া পড়িয়াছে, মন বেহুঁস্‌ হইয়া সেই নামরূপী ভগবানের দিকে ছুটিয়াছে। তিনি কে, যিনি শুধু নাম দিয়াই আমার মন হরণ করিয়াছেন? আমার বিদ্রোহী ইন্দ্রিয়গুলি আগুনের মত জ্বালা উৎপাদন করিতেছিল, সেই অগ্নিকুণ্ডে শুধু নামের গুণেই যেন বারি বর্ষিত হইল–সকল জ্বালা, সকল তাপ জুড়াইয়া গেল।

 এখন তাঁহাকে কি করিয়া পাইব? তিনি কে, কেমন করিয়া জানিব? ফুলের মালা হাতে করিয়া আছি, কাহাকে পরাইব?

“নাম-পরতাপে যার ঐছন করল গো
অঙ্গের পরশে কিবা হয়!”

নাম-জপ শুষ্ক দৈহিক প্রক্রিয়া ছিল, কিন্তু এই বালুস্তূপ এক লুক্কায়িত ফল্গুনদীর অমৃত-উৎসের সন্ধান দিল। নাম শুনিলে মন চকিত হরিণীর ন্যায় ইতি-উতি কাহাকে খুঁজিতে থাকে? হারানিধি হইতেও তিনি প্রিয়তর, পৃথিবীর সমস্ত সুখ সে আনন্দের কণিকাও দিতে পারে না—

“না জানি কতেক মধু, শ্যাম-নামে আছে গো—
বদন ছাড়িতে নাহি পারে!”

যত বার তাঁর নাম আবৃত্তি করিতেছি, তত বার সাংসারিক ক্লান্তি ও অবসাআদ দূর হইয়া এক অলৌকিক পরমানন্দের আভাষ পাইতেছি, চক্ষু দুইটি অশ্রু-সিক্ত হইতেছে।

 তাঁহাকে দেখি নাই, শুধু নাম শুনিয়াছি, তাহাতেই আমি আপন ভুলিয়াছি—তাঁহার স্পর্শ যেন কিরূপ? সে অমৃত-সায়রে কবে